করোনা মহামারি বিস্তার রোধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের অর্ধেকের বেশি পার হয়ে গেলেও অক্টোবরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনও ইতিবাচক নির্দেশনা নেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র।
অন্যদিকে অক্টোবর বাদ দিয়ে আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩৯ দিনের জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (ন্যাপ)। এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন পরিস্থিতি অনুযায়ী অক্টোবরেও সম্ভবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। আর সে কারণেই নভেম্বর থেকে পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে সংক্ষিপ্ত পাঠপরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে।
আগামী ১ নভেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর টার্গেট করে ৩৯ দিনের সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনায় দেখা গেছে বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হলে ১ নভেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বরের পর্যন্ত ৩৯ দিন চলবে পঞ্চমের শ্রেণি শ্রেণি কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের শেষ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে প্রস্তুতি লাগবে ১৫ দিন। সেই হিসেবে অক্টোবরে প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য নয়, শুধুই প্রস্তুতির জন্য। নভেম্বর খোলা সম্ভব হলে চলবে শুধু পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রম।
সংক্ষিপ্ত এই পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা না গেলে শ্রেণি মূল্যায়নেরও সুযোগ থাকবে না বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। ফলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অটো পাস দিতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য শ্রেণিতেও দেওয়া হবে অটো প্রমোশন।
গত ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দফায় দফায় বাড়িয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এই ছুটি পুরো অক্টোবর পর্যন্ত বাড়তে পারে সম্ভাবনা মাথায় রেখে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি করা হয় বলে জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন জানিয়েছেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বরকে দুটো টার্গেট করে দুটি লেসন প্ল্যান তৈরি করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নভেম্বর থেকে সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। অক্টোবরে খোলার বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশনা নেই। পরিস্থিতি উন্নতি হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি নভেম্বরে স্কুল খোলা না যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী যেটি বলেছেন, আমাদের অটো পাস ছাড়া উপায় নেই।’
ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছুটি বাড়ানো বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’ অক্টোবরে খোলার বিষয়ে কোনও নির্দেশনা দিতে পারেনি। করোনা আক্রান্তের হার কমলেও সিঙ্গেল ডিজিটে এখনও যায়নি। আক্রান্তের হার সিঙ্গেল ডিজিটে গেলে তখন বোঝা যাবে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনায় আক্রান্তের হার যেভাবে কমছে তাতে নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যেতেও পারে। অক্টোবরের মাঝামাঝি যদি করোনায় আক্রান্তের হার সিঙ্গেল ডিজিটে চলে আসে তাহলে ১৫ দিনের প্রস্তুতি নিতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে।’
আর নভেম্বরের শুরুতে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিসেম্বরে খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ে নিতে হবে। সেক্ষেত্রেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ দিন সময় লাগবে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। সেই হিসেবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রমের জন্য সময় থাকে মাত্র চার দিন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সব বিষয় মাথায় রেখে গত ১৮ আগস্ট প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার প্রস্তাবনা পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর গত ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে ফাইল পৌঁছে। ওই দিনই মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, পিইসি ও সমমান পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে না। স্ব-স্ব বিদ্যালয় নিজেরা নিজেদের মতো করে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করবে।
মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত ১৭ মার্চ থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ। এতে ৭১ কার্যদিবস বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। সে কারণে পঞ্চম শ্রেণির ৪০৬টি স্বাভাবিক পাঠদান সম্ভব হবে না। আর গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পাঠদান সম্পন্ন হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ির শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। পাশাপাশি প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। তবে পুরো বিষয়টি কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও করোনার পরিস্থিতি অনুযায়ী।
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় প্রস্তুতি নিয়ে নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা গেলে ১ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। এই পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে পঞ্চম শ্রেণির মূল্যায়নের সময় থাকলে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন করবে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন ব্যাখ্যাসহ জানান, নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না গেলে মূল্যায়নও সম্ভব হবে না।
এদিকে সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনায় বলা হয়, গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক স্তরের প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির আগে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ শিখন সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা করা হয়েছে।
Leave a Reply