সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ‘পুলিশের নির্যাতনে’ মারা যাওয়া রায়হান আহমদের প্রথম ময়নাতদন্তের ভিসেরা রিপোর্ট এখন পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর হাতে।
গত ২৭ নভেম্বর রিপোর্টটি পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। অতিরিক্ত আঘাতেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে এ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।রিপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন।
তিনি বলেন, প্রথম ময়নাতদন্তের ভিসেরা রিপোর্টটি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিরিক্ত আঘাতেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। গত ১১ অক্টোবর সকালে মারা যান নগরীর আখালিয়া বাসিন্দা রায়হান আহমদ (৩৪)। আগের রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে এনে নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই রাতেই হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তামান্না আক্তার।
১১ অক্টোবর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রায়হানের প্রথম ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়না তদন্ত শেষে রায়হানের শরীরে শতাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন সংশ্লিস্ট চিকিৎসক। ভিসেরা রিপোর্টেও তার সত্যতা পাওয়া গেলো।
তবে হেফাজতে মৃত্যু আইন অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ময়নাতদন্ত করার নির্দেশনা থাকলেও প্রথম দফায় তা মানা হয়নি। পরে ১৫ অক্টোবর কবর থেকে লাশ উত্তলন করে ২য় দফায় আবারও রায়হানের ময়নাতদন্ত করা হয়।
নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এ কমিটি অনুসন্ধানে ফাঁড়িতে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।
গত ১৩ অক্টোবর থেকে লাপাত্তা হয়ে যান আকবর। তাকে গ্রেফতারে আন্দোলন দানা বাঁধে সিলেটে। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তারা জানায়, তিনি ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। পরদিন আদালতে হাজির করে আকবরের সাত দিনের রিমান্ড চায় পিবিআই। আদালত সাত দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শেষে ১৭ নভেম্বর আকবরকে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি, মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইও নতুন করে রিমান্ডের আবেদন করেনি। ফলে আদালত আকবরকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
গত ১৯ নভেম্বর রাতে ডোনা সীমান্ত এলাকার একটি পাহাড়চূড়া থেকে আকবরের দুটি মুঠোফোন, তিনটি সিমকার্ড, শার্ট-প্যান্ট ও গেঞ্জি, ২০ টাকার একটি নোট, তার দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং এক মহিলার দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি উদ্ধার করা হয়। এগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে পিবিআই।
রায়হান হত্যা মামলায় এখন অবধি এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কনস্টেবল টিুটু চন্দ্র দাস, হারুনুর রশিদকে দুই দফায় আট দিন করে এবং এএসআই আশেক এলাহীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাদের প্রেরণ করা হয় কারাগারে।
Leave a Reply