আমরা সবাই জানি ও মানি যে, পরীক্ষায় ভালো ফল করা আর ভালো ছাত্র হওয়া এক কথা নয়। আমি নিজেকে মেধাবী ছাত্র কিংবা কোন ছাত্রনেতা দাবি করি না, তবে আমি পরিশ্রমী। যৌবনের সোনালী সময়টুকু ব্যয় করেছি রাজপথে, রক্ত ঝরিয়েছি, জেল খেটেছি। এদেশে ইস্যুর অভাব নেই। তাই মাঝে-মাঝে ইচ্ছে করে কিছু একটা লিখতে। কিন্তু মাতৃভূমির ইস্যুগুলো আমাকে যতটা না দোলা দেয়, তার ছিঁটেফোঁটাও দেয় না জাতীয় ইস্যু -এ আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম কক্সবাজার জেলা তথা সমগ্র বিভাগ জুড়ে সর্বমহলে বহুল আলোচিত “মহেশখালী জাগ্রত ছাত্রসমাজ” নিয়ে কিছু লিখি।
২০১৮ সালের প্রারম্ভ থেকেই জন্মভূমি মহেশখালীর সাধারণ জনগণের অধিকার আদায়ের মূলমন্ত্রে বলীয়ান আদর্শিক প্ল্যাটফর্ম মহেশখালী জাগ্রত ছাত্রসমাজের যাত্রা শুরু। অত্র অঞ্চলের গণমানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ, দেশপ্রেমিক, সমমনা ছাত্রবন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলি প্রাণের এই সংগঠন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার যে ভিশন-২০৪১ তথা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিনত করার জন্য বিভিন্ন মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, তারই ধারাবাহিকতায় কয়লাভিত্তিক বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছিল যা এখনো চলমান। আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এসেছি শুরু থেকেই। আমাদের আন্দোলন ছিলো প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের, প্রকল্প এলাকার উদ্বাস্ত মানুষের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন আদায়ের। আন্দোলনের একপর্যায়ে আমরা দেখতে পাই, গুটিকয়েক শোষকশ্রেণি আমার অবহেলিত ভূমিমালিক ও চাষীদের বঞ্চিত করে নিজেদের পকেট ফুলাতে ব্যস্ত। কেটে নিচ্ছে জমির মূল্যের বড় একটা অংশ। একে তো ভূমিহীন, তার উপর জুলুমের শিকার এসব মানুষকে দেখে আমরা আর চুপ থাকতে পারিনি। শপথ নিয়েছিলাম যতদিন এই দুর্নীতিবাজ, সুবিধাভোগীদের কালোহাত গুঁড়িয়ে দিতে না পেরেছি, ততদিন আমরা ক্ষান্ত হব না। সেই লক্ষ্যে আমরা মহেশখালী জাগ্রত ছাত্রসমাজের ব্যানারে ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিপ্লবী ছাত্র ও সম্মানিত পেশাজীবী বড়ভাইদের অনুপ্রেরণায় মহেশখালীজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পথসভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিলাম যা হয়তো আপনারা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বা টিভি চ্যানেলে দেখেছেন। আমরা মানববন্ধন করেছিলাম চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। ডিসি মহোদয়ের মাধ্যমে আমাদের দাবি-দাওয়া স্মারকলিপি আকারে পৌঁছে দিয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর। আমাদের উদ্দেশ্য মহৎ ছিল বলেই প্রশাসন সবসময় আমাদের সমর্থন যুগিয়েছে। কিন্তু একশ্রেণির বিশেষ মহল আমাদের আন্দোলনকে বানচাল করতে আমাদের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দিয়ে প্রচারণা চালাতে শুরু করেছিল। তবুও আমরা দমে যাইনি। বরং পুরোদমে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি। শুধুমাত্র মহেশখালীর সাধারণ মানুষ তাদের ভূমি অধিগ্রহণের ন্যায্যমূল্য যাতে ভোগান্তিহীনভাবে ঠিক মতো পায়, তার জন্যই আমরা আন্দোলন করেছি। আপনারা দেখেছেন, যা করেছি অনেকটা সফল হয়েছি, আমাদের আন্দোলনের কারণে সাধুদের মুখোশ উন্মোচন হতে গেছে। আমরা দালালচক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম প্রিয় জন্মভূমির সাধারণ মানুষকে। জানি না কতটুকু পেরেছি। তবে আমরা হাল ছাড়ছি না মোটেও।
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে উঠা মহেশখালী নামক এই দ্বীপটা বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড় সমৃদ্ধ দ্বীপ। এই দ্বীপে রয়েছে প্রাচুর্য, রয়েছে জীববৈচিত্র্য, অনাবিষ্কৃত প্রাকৃতিক সম্পদের সমাহার। আছে সবুজেভরা পাহাড়, নদী ও লোনা পানির অজস্র সম্পদ। কিন্তু এসব এখন অনেকটাই সংকটে পড়েছে। কিছুদিন আগে বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টার পত্রিকায় মহেশখালী নিয়ে একটা প্রতিবেদন দেখে খুবই খারাপ লাগলো। সেখানে বলা হচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশ দূষণের কারণে ও ব্যাপক জনসংখ্যার চাপে প্রিয় মাতৃভূমি দ্বীপটি তাঁর স্বকীয়তা হারাবে। সবুজ কেড়ে নিবে ইট-পাথরের জঞ্জাল। মাটির মানুষগুলো যান্ত্রিক হয়ে যাবে। হয়তো নিজভূমেই পরবাসী হতে হবে আমাদের। তবুও আমরা স্বপ্ন দেখি, মহেশখালীর মানুষের জায়গার উপর যে প্রকল্প তাতে মহেশখালীর মানুষকে শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তা বিধান করার। আমরা স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ আধুনিক মহেশখালীর যার নেতৃত্ব এই অঞ্চলের মেধাবী, পরিশ্রমী, দেশপ্রেমিক সন্তানেরা। আমার সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। কিন্তু এখানেই থেমে গেলে হবে না, পাড়ি দিবে আরো বহু পথ। সেই পথ খুবই বিপৎসংকুল, সে পথে আছে নানান বাধা-বিপত্তি। ইনশাআল্লাহ, আমাদের যাত্রাপথে কোন বাধাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
শুভেচ্ছান্তে
ফজলে আজিম মো.ছিবগাতুল্লাহ
আহবায়ক, মহেশখালী জাগ্রত ছাত্রসমাজ।
Leave a Reply