জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ভঙ্গ করে কঠোর লকডাউনেও ভারত থেকে চোরাই পথে আসা নেত্রকোণা দূর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে পাচারকালে ১৮ কারবারি সহ প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ৬ ট্রাক ভারতীয় পণ্য গৌরীপুর উপজেলার বেলতলি এলাকা থেকে ‘র্যাব ১৪ ময়মনসিংহ’ আটক করার পর….
‘আ’বা’র’ও নেত্রকোণা কলমাকান্দার ল্যাংগুড়া সীমান্তের কালাপানি নামক স্থান হতে অবৈধ পথে আসা ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ৬০০ কেজি ভারতীয় চা-পাতা আটক করেছে ৩১ বিজিবি সদস্যরা। ১২ মে (বুধবার) নেত্রকোণা ব্যাটালিয়ন ৩১ বিজিবি’র উপ-অধিনায়ক মেজর নূরুদ্দীন মাকসুদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
১১ মে (মঙ্গলবার) নেত্রকোণা ব্যাটালিয়ন ৩১ বিজিবি’র অধীনস্থ নেত্রকোণা কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুড়া বিওপি’র সুবেদার মোঃ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি দল অভিযান চালিয়ে ১১৭০ নম্বর মেইন পিলারের কাছে কালাপানি নামক স্থান থেকে এই চা পাতা আটক করা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জনানো হয়। জব্দকৃত চা পাতার বিষয়ে কলমাকান্দা থানায় জিডি করা হয়েছে। তবে জড়িত কোন চোরাকারবারীকে আটক করা সম্ভব হয়নি.!
এর মাত্র ২ দিন আগে ১০ মে (সোমবার) উপজেলার ৫নং লেংগুড়া সীমান্তের ১১৭০/৬-এস এর আনুমানিক ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তর হতে ১১ লাখ ৮১ হাজার ৯৩২ টাকা মূল্যের ভারতীয় পণ্য আটক করে ৩১ বিজিবি নেত্রকোণা। যার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় স্কীন শাইন ক্রীম, হরলিক্স, জুনিয়র হরলিক্স, নিহার কোকোনাট হেয়ার ওয়েল, 7 হেয়ার ওয়েল এবং কোলগেট টুথপেষ্ট। জড়িত কারবারি আটক হয়নি.!
এপ্রিলেই কলমাকান্দা লেংগুড়ার কালাপানি নামক স্থান থেকে ৫টি ভারতীয় গরু বিজিবি কর্তৃক জব্দ করা হয়। আটক হয়নি চোরাচালানি.!
১৯ এপ্রিল ল্যাংগুড়ার তারানগর গ্রামের মহসীন মিয়ার বাড়ি থেকে ভারতের গৌহাটি থেকে অবৈধভাবে চোরাই পথে আনা আনুমানিক ৩০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের বিশাল আকৃতির ৩২ টি ভারতীয় গরু আটক হয়নি!
৪ মে (মঙ্গলবার) উপজেলার ৫নং লেংগুড়া ইউনিয়নের চকলেটবাড়ী নামক স্থান হতে আনুমানিক ২ লক্ষ টাকা মূল্যের ২টি ভারতীয় গরু জব্দ করেছে বিজিবি সদস্যরা। জড়িত কোন চোরাকারবারি আটক হয়নি.!
এর আগে নলুয়াপাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধভাবে চোরাই পথে ভারতে পাচারকালে প্রায় ২ হাজার ১১৫ কেজি (৪৩ বস্তা) বাংলাদেশী পঁচা সুপারি আটক করেছে নলুয়াপাড়া সীমান্তের বিজিবি সদস্যরা। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
নেত্রকোণা ৩১ বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) দূর্গাপুর, নলুয়াপাড়া বিওপিতে কর্মরত নায়েক সাজ্জাদ হোসেন এর নেতৃত্বে টহল কর্তৃক সীমান্ত পিলার হতে প্রায় ৩০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোপালপুর নামক স্থান হতে ভারতে পাচারকালে (৫০ কেজির বস্তায় ভর্তি ৪৩ বস্তা) সুপারি আটক করেছে বলে জানায়, দ্বায়িত্বে থাকা ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবুল আলম চৌধুরী। চোরাকারবারে জড়িত কেউ আটক হয়নি বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, ভারতের মেগালয়- আসাম- ত্রিপুরা ও গৌহাটি রাজ্যের পান পিপাসুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় বাংলাদেশী এই পঁচা সুপারি!
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকা বিভিন্ন শ্যাম্পু, সাবান সহ বিভিন্ন কসমেটিকস,চকোলেট,বিস্কুট,হরলিক্স,বেবিফুড,জিরা, এলাচি,মসুর ডাল,বাসমতী চাল,ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী,শাড়ি,প্যান্ট, থ্রি-পিস সহ বিভিন্ন পণ্যের যোগানদাতা রাজ্যগুলোর মহাজনদের খুশি রাখতে বাংলাদেশী পঁচা সুপারি ভারতে পাচার করে থাকে চক্রটি।
ময়মনসিংহের জামালপুর-শেরপুর থেকে এই সমস্ত পঁচা সুপারি সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন যাবৎ চোরাই পথে ভারতে পাচার করে আসছে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্রটি।
জানা যায়, জেলার দূর্গাপুর সীমান্তের বিজয়পুর, ভবানীপুর, নলুয়াপাড়া সীমান্ত এবং কলামাকান্দা উপজেলার ল্যাংগুরা, বরুয়াকোনা, পাচগাঁও সীমান্ত এলাকায় বেশ দাপটের সাথে চোরাচালানে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি দল।
সীমান্তের ওপার থেকে অবৈধভাবে চোরাই পথে আসা ভারতীয় পণ্য প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে দূর্গাপুর সীমান্ত থেকে পূর্বধলা- শ্যামগঞ্জ মহাসড়ক হয়ে এবং কলমাকান্দা সীমান্ত থেকে সীধলী বাজার হয়ে নেত্রকোণা এবং বাউসী বাজার হয়ে বারহাট্টা-আটপাড়া হয়ে মহাসড়ক ধরে ময়মনসিংহ সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার হচ্ছে এই সমস্ত ভারতীয় পণ্য। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে চোরাচালানে জেলায় গড়ে উঠেছে অন্ততঃ ছোট বড় ৭-৮ টি চোরাকারবারি দল।
ভারত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাচালান ঘোড়ার গাড়িযোগে নির্দিষ্ট দূরত্বে আনার পর চোরাচালান পাচারে সক্রিয় কয়েকটি কাভার্ডভ্যান সহ অন্ততঃ ৯/১০ টি সিএনজি।
ফলে একদিকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হাড়াচ্ছে অন্যদিকে হুমকির মূখে পড়ছে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
এছাড়াও জেলার সীমান্ত দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় মদ- রয়েল, এ্যাসিব্ল্যাক, অফিসার চয়েস, রেডবোল, বিয়্যার, গাজাঁ, বিভিন্ন সফটড্রিংস,গরু,মহিষ সহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য নেত্রকোণার সীমান্তকে চোরাচালানের ‘গোল্ডেন-ওয়ে’ হিসেবে ব্যবহার করছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্র।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এপার-ওপার থেকে পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বাংলাদেশী ও ভারতীয় মুদ্রা ‘টাকা’-‘রুপি’ বানিজ্যেও তৎপর আরেকটি চ’ক্র। মাঝেমধ্যে দু’একটা চোরাচালান ধরা পড়লেও বেশিরভাগ বড় বড় ‘রা’ঘব’বো’য়া’ল’রা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে.!
চোরাচালান বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া আছে বলে জানান, কাজি মোঃ আব্দুর রহমান, জেলা প্রশাসক নেত্রকোণা।
সম্প্রতি বাংলাদেশে কোভিড-১৯’র ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’র উপস্তিতি বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে! এসময় সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ ও চোরাকারবার বন্ধ না হলে বাংলাদেশের অবস্থাও ভয়াবহ বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
Leave a Reply