মাদক মামলার প্রকৃত আসামির পরিবর্তে রাজধানীর পল্লবীর নিরাপরাধ মো. আরমানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় সাত পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়ী করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটির দেওয়া এ প্রতিবেদন সোমবার আদালতে দাখিল করা হয়েছে। কাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আরমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব।
প্রতিবেদনে যাদের দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন-পল্লবী থানার সেসময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম, আরেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. দাদন ফকির, মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক এসআই বর্তমানে পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম খান, আরমানকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনাকারী টিম প্রধান সাবেক এসআই (বর্তমানে পরিদর্শক) মো. রাসেল, সাবেক এএসআই(বর্তমানে এসআই) হযরত আলী, তৎকালীন ডিউটি অফিসার সাবেক এসআই(বর্তমানে পরিদর্শক) মনিয়ারা আক্তার এবং সাবেক এএসআই(বর্তমানে অবসরে) খান ইমদাদুল হক। এরা কে কিভাবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন তা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতি এড়াতে ৪ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে,(১) আসামির নামের সঙ্গে তার পিতা-মাতার নাম সঠিকভাবে লিখতে হবে। (২) আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তার ছবি ধারণ করতে হবে।(৩) আসামির সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য অনুসন্ধান স্লিপের(ই/এস) সঙ্গে আসামির ছবি সংযুক্ত করতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত অনুসন্ধান স্লিপের পরিবর্তে তদন্ত কমিটির প্রস্তাবিত ফরম ব্যবহার করতে হবে। এজন্য ওই ফরম ছাপিয়ে সকল থানায় সরবরাহ করতে হবে। এবং (৪) আসামির জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট(যদি থাকে), ড্রাইভিং লাইসেন্স(যদি থাকে) এবং জন্মনিবন্ধন সংযুক্ত করতে হবে।
হাইকোর্ট গতবছর ৩১ ডিসেম্বর এক রায়ে আরমানকে বেআইনিভাবে আটকের ঘটনায় দায় নিরূপনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইয়ের উপ-মহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির রিপোর্ট গতকাল হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
মাদক মামলায় নিরপরাধ আরমানকে কারাগারে বন্দি রাখা নিয়ে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন যুক্ত করে ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন একটি রিট আবেদন করে। এই রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন আদালত। পরবর্তীতে এ নিয়ে আরমানের মা বানু পৃথক একটি রিট আবেদন করেন। এই রিট আবেদনে হাইকোর্ট ৩১ ডিসেম্বর রায় দেওয়া হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫ সালের ৩০ আগষ্ট রাতে পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৮ নম্বর লেনের ৭ নম্বর ভবনের নীচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ শাহাবুদ্দিন এবং তার দুই সহযোগি সোহেল মোল্লা ও মামুন ওরফে সাগরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় দুইবছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান শাহাবুদ্দিন। মামলায় বিচার শেষে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর রায় দেয় ঢাকার একটি আদালত। রায়ে শাহাবুদ্দিনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু রায়ের দিন শাহাবুদ্দিন পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ মামলায় ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পুলিশ বেনারসি কারিগর মো. আরমানকে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে আরমান কারাবন্দী। মূল আসামি শাহাবুদ্দিনের পিতার নাম ইয়াসিন ওরফে মহিউদ্দিন। আর আরমানের পিতার নামও ইয়াসিন। উভয় ইয়াসিনই মৃত।
Leave a Reply