গোটা ইসরায়েলকে ঘাঁটি করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম জাহানে মার্কিন আগ্রাসন চলছে যুগের পর যুগ। ইহুদি অধ্যুষিত এই দেশটি এখন মুসলিম দুনিয়ার জন্য উদ্বেগের বড় কারণ। এই একটি মাত্র দেশকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে বিভেদের জাল ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশসহ ওআইসিভুক্ত প্রায় প্রতিটি দেশ ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। আর বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের যেকোনও দেশ ভ্রমণ করা গেলেও ইসরায়েল যাওয়া যায় না।
সেই ইসরায়েলের জন্ম ইতিহাস কী? অনেকেই হয়তো তা জানি না। রাশিয়ার ‘দ্য ফাদার অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মেন্টেশন’ খ্যাত রসায়নবিদ ও বিজ্ঞানী শেইম ভাইজম্যানের নামটির সঙ্গে অনেকেরেই হয়তো পরিচয় আছে। সেই ভাইজম্যান জৈব রসায়নে পড়াশোনা করেন জার্মানিতে। রসায়নের শিক্ষার্থীরা তাই ‘ফার্মেন্টেশন’ শব্দটার মানে সহজেই ধরে ফেলতে পারেন।
পৃথিবীজুড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করেছে তখন। সেই বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের রাজকীয়তার জানান দিতে দিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে কিছুটা বিপদেই পড়লো ব্রিটিশরা। তৎকালীন সময়ে দুপক্ষের সেনাদের বাইরে মূল যুদ্ধটা হতো বিজ্ঞানীদের মধ্যে। যে পক্ষের বিজ্ঞানীরা যত বেশি নতুন নতুন মারণাস্ত্র আবিষ্কার করতে পারতেন সেই পক্ষই বিজয়ী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যেতেন।
১৯ শতকের প্রথম দিকে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে প্রচলিত ও শক্তিশালী বিস্ফোরক ছিল ডিনামাইট। যাদের কাছে যত পরিমাণ ডিনামাইটের মজুদ আছে, তারা তত বেশি শক্তিশালী ছিল। তবে এই ডিনামাইট তৈরিতে প্রয়োজন হতো ‘অ্যাসিটোন’ নামক এক ধরনের জৈব যৌগের।
তৎকালীন সময়ের প্রচলিত রাসায়নিক পদ্ধতিতে অ্যাসিটোন তৈরি করা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। উৎপাদনের হারও ছিল খুব সীমিত। কিন্তু পর্যাপ্ত অ্যাসিটোন না থাকলে তো ডিনামাইট বানানো সম্ভব নয়! এ কারণে ব্রিটিশরা যুদ্ধের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছিল।
বিশ্বযুদ্ধ যখন পুরোপুরি শুরু হলো যখন চারপাশে ডিনামাইট সংকট দেখা দিতে শুরু করলো ঠিক তখনই শেইম ভাইজম্যান এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করলেন। সেই সঙ্গে ইংলিশদের এনে দিলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। অ্যাসিটোন উৎপাদনে সক্ষম ‘ক্লোস্ট্রিডিয়াম এসেটোবুটিলিসাম’ নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান বের করলেন তিনি। এ পদ্ধতিতে অনেক দ্রুত অ্যাসিটোন উৎপন্ন করে প্রচুর ডিনামাইট তৈরি করা হলো। তাতে বিপদে পড়া ব্রিটেনের জয়ের পথটাও আরও সুগম হলো।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ হলো, ব্রিটিশরা যখন বুক ফুলিয়ে বিজয়ের নিশান উড়িয়ে ইংল্যান্ডের পথে যাত্রা করলো তখন তৎকালীন ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া শেইম ভাইজম্যানকে স্মরণ করলেন। এত বড় বিপদের মুখে বিকল্প ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করে ইংল্যান্ডের শক্তি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখায় রানি স্বীকৃতিস্বরূপ ভাইজম্যানকে পুরস্কৃত করতে চাইলেন। কিন্তু ওই বিজ্ঞানী কোনও অর্থ কিংবা বৈষয়িক পুরস্কার নিতে রাজি হলেন না।
তখন রানি তাকে বললেন- ‘আপনি কী চান? যা চাইবেন তা-ই দেয়া হবে’। সুযোগটা হাতছাড়া করার মতো কিঞ্চিত নির্বোধ পাত্র ছিলেন না মহাজ্ঞানী এই বিজ্ঞানী। কারণ ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন একজন ‘জায়োনিস্ট’ (ইহুদিদের জন্য একটি পবিত্র স্থানের দাবি করে আসা একটি গ্রুপ)। তাইতো নির্দের আদর্শ ও লক্ষ্যকে স্থির রেখে ভাইজম্যান রানির কাছে ইহুদিদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র দাবি করে বসলেন।
কথা দিয়েছেন রানি, তাই এত বড় উপকার করা একজন বিজ্ঞানীকে খালি হাতে ফেরাতেও পারেন না। তখন রানি ভিক্টোরিয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে রাশিয়ান ওই বিজ্ঞানীকে ইসরায়েল রাষ্ট্রটি দিয়ে দেন। সেই থেকে ইহুদিরাও পেয়ে যায় পৃথক ভূখণ্ড। এভাবেই জন্ম হয় ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রটির। যার প্রথম রাষ্ট্রপ্রধানও ছিলেন সেই শেইম ভাইজম্যান।
Leave a Reply