এই নির্বাচন কমিশনকে আমরা সব সময় বলে আসছি এটি নিরপেক্ষ কোন সংগঠন নয়। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন আওয়ামী লীগের একটা লেজড়ভিত্তিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলা ও কিশোরগঞ্জ আংশিক নিয়ে নীলফামারী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নীলফামারী জেলা শাখার আহ্বায়ক বিরোধীদলীয় সাবেক হুইপ শওকত চৌধুরী বিএনপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, শওকত চৌধুরীর যোগদানের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ এখন গণতন্ত্র চাই। বাংলাদেশের মানুষ এখন কথা বলতে চাই। তাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের আজকে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে এমন একজন সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই দেশের শান্তি পুরোপরিভাবে বিঘ্নিত হয়ে গেছে। এই সরকার আসার পর থেকে দেশের বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।এই সরকার আসার পর থেকে প্রশাসন তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। এখন প্রশাসনের মাঝে দলীয়করণ চলছে। নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরিভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের একটা অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কর্ম কর্তার কোন ব্যক্তিত্ব নেই, সংবিধান অনুসারে তার এই প্রতিষ্ঠানকে চালানোর কোন ক্ষমতা নেই। আপনারা দেখেছেন গতকাল চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনে যা হয়েছে আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন। একেবারে রক্তাক্ত নির্বাচন হয়েছে। দুই জন কিংবা তিনজন মারা গেছে। বিরোধী দল অর্থা— বিএনপির কোন এজেন্টকে কেন্দ্রে থাকতে দেয়া হয়নি। তাদেরকে শারীরিক অত্যাচার করে বের করে দেয়া হয়েছে। দু:খজনক হলো এখন নির্বাচনগুলোতে প্রশাসনকে পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন আর আওয়ামী লীগ নই, বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন পুলিশ প্রশাসন।
তিনি আরো বলেন, আমরা আজ দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছি। দলের আপোষহীন চেয়ারম্যান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রাখার পর এখন তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। আজকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। প্রায় ৫শ যুব নেতা, ছাত্র নেতা, সংসদ সদস্যকে গুম করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের মানুষ আগে কখনও জানতো না। আজকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা অংশ নিচ্ছি কেন? বিএনপি একটা লিভারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে। আমরা কখনও ভিন্ন পথে বন্দুক পিস্তল দিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করতে চাই না। বিএনপি জনগণকে নিয়েই ক্ষমতায় যেতে চাই।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এই নেতা আরো বলেন, অনেকে বলেন এই নির্বাচন করার কি যুক্তি আছে। আমরা বলি এই নির্বাচনকে আমরা গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটা অংশ হিসাবে দেখি। এটা আমাদের একটা পার্ট। আমরা এটার মাধ্যমে আমাদের নেতা কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে পারি। আবার আমরা এর মাধ্যমে জনগণের কাছে যেতে পারি। যেটা অন্য সময় যাওয়া খুব কঠিন। কারণ মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ কিছুই করতে দেই না। যেটা গণতান্ত্রিকতার নূণ্যতম একটা অধিকার মাত্র।যেটাকে আমরা বলি ডেমোক্রেটিস স্পেস। আর সেই ডেমোক্রেটিস স্পেসকে তারা নিয়ে নিয়েছে।
এই কারণেই আমরা নির্বাচনে যায়।
তিনি আরো বলেন, এই নির্বাচন কমিশনকে আমরা সব সময় বলে আসছি এটি নিরপেক্ষ কোন সংগঠন নয়। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন আওয়ামী লীগের একটা লেজড়ভিত্তিক সংগঠন। মূলত এই সংগঠন আওয়ামী লীগের একটা অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কর্ম কর্তার কোন ব্যক্তিত্ব নেই, সংবিধান অনুসারে তার এই প্রতিষ্ঠানকে চালানোর কোন ক্ষমতা নেই।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতে ভোট নিয়ে গেছে। ভোট তো হইনি ভোট দখল করে নিয়ে গেছে। আজকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গিয়েও একই কায়দায় তারা কাজ করছে। আমরা বারবার বলেছি এই নির্বাচন বন্ধ করতে হবে।২০১৮ সালের নির্বাচনকে বাতিল করে একটা নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় নির্বাচন চেয়েছি। এটা খুবই জরুরি।
এই নির্বাচন কমিশনারের দ্বায়িত্ব হলো একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালন করা। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েকবছর ধরে বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একটা প্রহসনে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, যে দেশে সংবিধানের মূল কথাই হচ্ছে জনগণ হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক। জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সরকার গঠন করবে। আর সেটাই হবে জনগণের সরকার। আমরা তাদের বারবার বলেছি এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।আমরা দাবি করছি এই নির্বাচন কমিশনারকে এই মুহুর্তে পদত্যাগ করা দরকার।আমরা দাবি করছি এই সরকারকে এই মুহুর্তে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তারা সংবিধানকে লঙ্ঘন করে জনগণের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে। এবং বিনা ভোটে একটা বেআইনি সরকার তারা হয়ে আছে। সুতরাং এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। এবং পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে হবে।
যোগদান অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল গফুর সরকার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ, রংপুর জেলা বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
Leave a Reply