অতি সম্প্রতি কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি।

রবিবার (২১ মার্চ) দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সবাই নেতারা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চলমান সমসাময়িক সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বলা হয়, অতীতের মতো এ পর্যায়ের সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনে ব্যর্থতার কারণেই সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। সরকারের ভ্যাকসিন সংগ্রহ সংরক্ষণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ও অস্পষ্টতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সংক্রমণের হার যখন বেড়ে চলেছে তখন বর্ষ উদযাপন ও উৎসবের আয়োজন, বই মেলা চালু করা এবং জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগ গ্রহণের ব্যর্থতা আশংকাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

সভা মনে করে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান, এজেন্সী গুলোকে সমন্বয় করে

ক. জনগণের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা
খ. হাসপাতাল গুলোতে পর্যাপ্ত আইসিইউসহ চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা নিয়োজিত করা।
গ. ভ্যাকসিন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য সুষ্পষ্ট রোড ম্যাপ জনগণকে অবহিত করা এবং কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়।
ঘ. সভায় দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মী ও জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।

সভায় কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নেতা-কর্মীদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নেতৃত্বে ইতিপূর্বে গঠিত ট্যাস্কফোর্স সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।

সভায় সুনামগঞ্জ জেলাধীন শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রামে ভাঙচুর, লুটপাট এবং হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভা মনে করে যে, অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ, এবং অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন, চিরাচরিত পদ্ধতিতে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা নিচ্ছে এবং বিরোধী দলের ওপরে দায়ভার চাপানোর অপচেষ্টা করছে। এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবার সকল দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। গণ-মাধ্যমে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে সত্য প্রকাশিত হয়েছে যে, আওয়ামী যুবলীগ নেতার উষ্কানিতে এবং নেতৃত্বে এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে।

সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নিতাই চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে একটি দল আক্রান্ত গ্রাম পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করার সন্তোষ প্রকাশ করে।

সভায় অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয় এবং দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের বিরোধী দলের ওপর দোষারোপ করা থেকে বিরত থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করবার আহ্বান জানানো হয়।

পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে সরকারী মদদ পুষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়াতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। চাল, ডাল, তেল, লবন, পেয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন এর জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সম্প্রতি পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১৭ মার্চ ২০২১ হতে ২৭ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত রাজনৈতিক ও সকল সামাজিক সমাবেশ, সভা, মিছিল নিষেদ্ধ করন বিষয়টি উত্থাপন করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করণীয় নিধারণে জন্য পুনরায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে কর্মসূচীর প্রস্তুতি চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে ড. মোশাররফকে একটি সংবাদ সম্মেলন করে জনগণকে অবহিত করার অনুরোধ করা হয়। এছাড়াও সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এবং ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত রুহুল আমিন এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।