দেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। কিন্তু এতেও কমেনি জনগণের উদাসীনতা। এ অবস্থায় জনস্বার্থে সরকার আগামী বুধবার থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ যাচ্ছে সরকার। করোনা মহামারি মোকাবিলায় ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। শনিবার (১০ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি এ অফিস আদেশ জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, জেলা পর্যায়ে কেভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য সরকারি কার্যক্রম সমন্বয়ে ৬৪ জন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে ৬৪ জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আজ রবিবার (১১ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদসচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর ‘লকডাউনের’ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার কথা রয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে সেটি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেটিও জানা যাবে আজ। ‘লকডাউনের’ সময় শুধু জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। হাসপাতাল, গণমাধ্যম, ফায়ার সার্ভিস, মানুষ ও প্রাণীর খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী যানবাহনের মতো বিষয়গুলো নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকবে। ওষুধের দোকানও খোলা রাখা যাবে। ব্যাংকও নির্দিষ্ট সময় খোলা রাখার নির্দেশনা আসতে পারে।
এর আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, ‘দেশব্যাপী করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। করোনার সংক্রমণ রোধে নতুনভাবে কঠোর লকডাউন আসছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শনিবার দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে। কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই আমরা ১৪ এপ্রিল থেকে পরিপূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ ১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হলে মাঝে ১২ ও ১৩ এপ্রিল এই দু’দিনের বিষয়ে কী নির্দেশনা থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২ ও ১৩ এপ্রিল বিষয়ে লকডাউন নিয়ে রোববার যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে সেখানে সব নির্দেশনা থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ‘এই অবস্থায় মানুষের ঘরে থাকাটাই জরুরি। মানুষ যদি এই কয়েক দিন ঘর থেকে না বের হয় এবং যে যেখানে আছে এভাবে থাকতে পারে তাহলেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুহার নিম্নমুখী হয়ে আসবে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাই মানুষকে কীভাবে ঘরে রাখা যায় সরকার সে ব্যবস্থা করছে। তিনি বলেন, সারাদেশে গ্রাম, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষ এই লকডাউনে যাতে তাদের খাবারের সমস্যা না হয় এবং খাবারের জন্য যাতে ঘর থেকে বের হতে না হয় সে বিষয়ে সরকার আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এসব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রতি জেলায় সচিবদের দায়িত্ব করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য সরকারি কার্যক্রম সুষ্ঠু সমন্বয়ের জন্য জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ৬৪ কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা সমন্বয় কাজে তাঁর মন্ত্রণালয় বা সংস্থার উপযুক্তসংখ্যক কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা হলেন- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম (মুন্সিগঞ্জ), আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম (কুমিল্লা), অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম (সিরাজগঞ্জ), জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন (চট্টগ্রাম), স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলারুদ্দীন আহমদ (কক্সবাজার), জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান (শরীয়তপুর), পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার (মানিকগঞ্জ), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল (যশোর), কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম (লালমনিরহাট), পূর্তসচিব শহীদ উল্লা খন্দকার (গোপালগঞ্জ), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (রাঙামাটি), রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব পবন চৌধুরী (লক্ষ্মীপুর), সড়ক সচিব মো. নজরুল ইসলাম (শেরপুর), ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ (ফরিদপুর), জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবুল কাশেম (রাজশাহী), কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক সত্যব্রত সাহা (গাজীপু
র), শিল্পসচিব কেএম আলী আজম (বরিশাল), সেতু সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন (বান্দরবান), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন (সাতক্ষীরা), বিপিএটিসির রেক্টর মো. রকিব হোসেন (নারায়ণগঞ্জ), যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. আখতার হোসেন (মাদারীপুর), রেল সচিব সেলিম রেজা(পাবনা), পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া (সিলেট), সমবায় সচিব রেজাউল আহসান (রংপুর), মুক্তিযুদ্ধ সচিব তপন কান্তি ঘোষ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম (চুয়াডাঙ্গা), শিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন (জামালপুর), মৎস্য সচিব রওনক মাহমুদ (পটুয়াখালী), স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব মো. আলী নূর (ঢাকা), পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী (সুনামগঞ্জ), মো. নুরুল ইসলাম (দিনাজপুর), বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা (নরসিংদী), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া (পিরোজপুর),পরিবেশ সচিব জিয়াউল হাসান (কুড়িগ্রাম), স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান (কিশোরগঞ্জ), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম (নীলফামারী), কারিগরি ও মাদ্রাসা সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান (মৌলভীবাজার), ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন (বগুড়া), নৌ-সচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী), মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয়) সচিব মো. কামাল হোসেন (খুলনা), পিপিপি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ (কুষ্টিয়া), শ্রম সচিব একএম আবদুস সালাম (নওগাঁ), আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী (নোয়াখালী), পরিসংখ্যান সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী (নাটোর), পিএসসি সচিব মোছা. আছিয়া খাতুন (রাজবাড়ী), দুর্যোগ সচিব মোহাম্মদ মোসীন (চাঁদপুর), সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফীন (খাগড়াছড়ি), পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. মামুন আল রশীদ (হবিগঞ্জ), পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম (মাগুরা), পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক (চাপাইনবাবগঞ্জ), জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা (গাইবান্ধা), বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান (বরগুনা), তথ্য সচিব খাজা মিয়া (নড়াইল), পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস(টাঙ্গাইল), ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল (ঝিনাইদহ), বিমান সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন (মেহেরপুর), ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান (পঞ্চগড়), জ্বালানী ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জাকিয়া সুলতানা (নেত্রকোনা), সমাজকল্যাণ সচিব মাহফুজা আখতার (বাগেরহাট), ইসি সচিব হ
ুমায়ুন কবীর খোন্দকার (ঝালকাঠি), পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান (ঠাকুরগাঁও), পার্বত্য সচিব মোছাম্মৎ হামিদা বেগম (ময়মনসিংহ), ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোকাব্বির হোসেন (ভোলা) এবং মহিলা ও শিশু সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম (জয়পুরহাট)।
Leave a Reply