কুয়েতের কারাগারে বন্দি লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের বিচার শুরু হচ্ছে ১৭ সেপ্টেম্বর। আদালতে তার বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আনা হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ করে কুয়েতের ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের এই খবর গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে বিবিসি বাংলায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত মিডিয়াটির খবরে বলা হয়, পাপুলের সঙ্গে এই মামলায় কুয়েতের আরও কয়েকজন অভিযুক্ত রয়েছেন, যাদের মধ্যে দেশটির দুজন আইনপ্রণেতার নামও রয়েছে। তাদের কেউ কারাগারে, কেউ জামিনে রয়েছেন।
মানবপাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন লক্ষীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি পাপুলকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয় কুয়েতের সরকারি কৌঁসুলিরা। ওই সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার প্রতিষ্ঠানের একজন হিসাবরক্ষকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তার বিপুল পরিমাণ ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়।
শহিদ ইসলাম পাপুলসহ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেয়া, অর্থপাচার, মানবপাচার এবং ভিসার অবৈধ লেনদেন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ তোলা হয়। তাকে সহায়তার অভিযোগ তোলা হয় কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে আবুল কালাম আজাদকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে চার দফায় পাপুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
গত ১৫ জুন আল-কাবাস এক প্রতিবেদনে জানায়, পাপুল তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, কুয়েতের তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ ৫০ হাজার দিনার বা এক লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৮ ডলার উপহার দিয়েছিলেন। পাপুলকে গ্রেফতারের পাশাপাশি তার মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে পাঁচ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা বাংলাদেশি টাকায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে পাপুলের গ্রেফতারের খবর প্রচারের পর তার স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম, কন্যা ও শ্যালিকা জেসমিন ইসলামের ব্যাংক হিসেব জব্দ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের সন্ধান পায়। এ জন্য গত ২২ জুলাই সেলিনা ইসলামকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদের পর দম্ভোক্তি করে পাপুলের স্ত্রী বলেছিলেন, আমরা (স্বামী পাপুল ও স্ত্রী সেলিনা) কিছু পেতে নয়, দেশকে কিছু দেয়ার জন্য এমপি হয়েছি। পাপুলের বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র। পাপুল বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স এনে দেশের অর্থনীতিতে ভ‚মিকা রাখছে।
সূত্র জানায়, কুয়েত আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কি সাজা হবে পাপুলের। কুয়েতের ২০১৭ সালের এক মামলার রায়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। দেশটির আইন অনুযায়ী অর্থপাচার প্রমাণিত হলে ৭ বছরের সাজা হবে পাপুলের। সেই সাথে মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে ১৫ বছর। আর সেক্সুয়াল মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড।
আলোচিত এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচারের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে দুদকে যে অভিযোগটি পেশ করা হয়েছে তাতে কুয়েতে মানব পাচার করে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ১৭৪ পাতার অভিযোগে মানব পাচার, মানি লন্ডারিং, ব্যাংকিং কার্যক্রমে দুর্নীতি, নামে-বেনামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
Leave a Reply