প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মো. শাহ আলমকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একই অভিযোগ এসেছে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এ জন্য পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পর এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পিকে হালদারের অনিয়মের সহযোগী হিসেবে আটক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম ও পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এর আগে দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের জবানবন্দির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে কখনো এ রকম ঘটনা ঘটেনি। ফলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা আলোচনা ও যাচাই-বাছাই ছাড়া বলা যাবে না। এছাড়া আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা এলে সেটিও দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর দেশজুড়ে তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। ব্যাংক খাত তদারকিকে যারা সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে এ রকম অনিয়মের বিষয়টি পুরো খাতের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারের নানা জালিয়াতির মাধ্যমে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করছে দুদক। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বিআইএফসি থেকে এসব অর্থ বের করে তিনি। দুদকের মামলায় রিমান্ডে থাকা ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবাবনবন্দি দিয়েছেন।
জবাবনবন্দিতে রাশিদুল হক বলেন, পিকে হালদারের ক্ষমতার অন্যতম উৎস ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সময়ের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী। তার মাধ্যমেই পিকে হালদার বিভিন্ন অনিয়ম চাপা দিতেন। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমানে নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো ২ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের সহকারী পরিচালক থেকে যুগ্ম-পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তারা বছরে দু’বার পরিদর্শনে আসতেন। অনিয়ম না ধরার জন্য প্রতিবার তাদের ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা দেওয়া হতো।
Leave a Reply