মৃত্যু পথযাত্রী ভাইয়ের অসুস্থতা থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠা অতঃপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একঘেঁয়েমী ও লোলুপ ব্যাবসার মনোভাবের কারনে ভাইয়ের মৃত্যু,পরিশেষে বিল নিয়ে শতভাগ বাটপারী খেলাঃ-
========================
গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ৬ অক্টোবর রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা ভাইয়ের পাশে থেকেও শেষ রক্ষা করতে পারলামনা, চেষ্টার কোনো ত্রুটিও ছিলোনা,যখনই চিকিৎসক যে ধরনের গাইড লাইন দিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি,কোনো কিছুতেই পিছ পা হইনি,আশা একটাই ছিলো যতোদিন হোক যতোই কষ্টই হোক আল্লাহর হুকুমে ভাইকে সুস্থ করে তুলবো,নিয়তও তাই ছিলো, নিজের ভালো মন্দের দিক বিবেচনা না করে ভাইয়ের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি,সবাই বলতো তুই একটু সাবধানে থাকিস,প্রতিত্তুরে আমি বলতাম আমার ভাই যদি আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়, আমার যদি কিছু হয়েও থাকে আমার কোনো চিন্তা থাকবেনা,কারন আমার জন্য ভাই বট গাছের মতো থাকবে, বিশ্বাসও তাই ছিলো,এমনকি খোদার কাছে নফল নামায পড়ে দোয়া করেছি যে হে খোদা আমার ভাইয়ের অসুখ আমাকে দিয়ে ভাইকে সুস্থ করে দাও।
আমার ভাই শেষের দুইদিন আগ পর্যন্ত মোটামুটি সুস্থতার পথে ছিলো, যখন দেখি ভাই আমার প্রতিটি সময় প্রতিটি মুহুর্তে চিকিৎসায় উন্নতি হচ্ছে,মনে মনে নিজের মধ্যে অনেক আশার আলোও প্রজ্জলিত হয়ে আমার প্রতি মিনিটের সেবা ও কষ্টগুলো নিমিষেই ভূলে গিয়ে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে পেতাম, আশা একটাই ভাইকে সুস্থ করে বাসায় ফিরিয়ে আনবো।
মৃত্যু পথযাত্রী ভাইকে খোদার কাছে জীবন ভিক্ষা চেয়েছি খোদা তায়ালা ভিক্ষা দিয়েছিলো বটে, কিন্তু হঠাৎ করে গত ৪ অক্টোবর ঠিক সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে আমি ভাইয়ের প্রত্যেক দিনের মতো টেস্ট রিপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য পাশ্ববর্তী Epic Health Careএ যাই, প্রায় আধা ঘন্টা পরে এসে দেখি উক্ত HDU ইউনিটে কোনো স্টাফ নার্স ডাক্তার এমনকি আমার সুস্থ হওয়ার পথে ভাইটিও নেই, সাথে সাথে আমি খবর নিয়ে দেখি সবাই ৫ম তলায় অবস্থান করে একটি কেবিনে আমার ভাইকে Non Breathing অক্সিজেনে রাখা হয়েছে।
এখানে CSTC হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও লোলুপ লিপ্সা আমার মনে সন্দেহবসিত করে,
যেমন:-(CSTC হাসপাতালের কোভিড ইউনিট ৭ম তলা HDU ইউনিট থেকে আমাকে না জানিয়ে আমার ভাইকে ৫ম তলা একটি কেবিনে স্থানান্তর করে) তাও হুইল চেয়ারে করে,
এখানে উল্লেখ্য! ভাই আমার যদি সামান্যতম মুভমেন্ট করার জন্য নাড়াচড়া করতো সাথে সাথে উনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০এর নীচে নেমে যেতো,তাই আমি কোনো প্রকারে ভাইকে HDU থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরের কল্পনাও মাথায় আনার সাহস করি নাই, সেখানে কিসের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে অবগত না করে HDUর বাহিরে আমার ভাইকে নিয়ে আসে।
কর্তৃপক্ষের লোলুপ লিপ্সা বলতে আমি বুঝাচ্ছি যে CSTC হাসপাতালের HDUতে গত দু দিন ধরে অন্য কোনো রোগী ভর্তি হন নাই,
হয়তো কর্তৃপক্ষ একজন রোগীর জন্য এতো বড় একটা ইউনিট চালিয়ে যেতে অপারগতা দেখায়,
আমার ভাইকে ৫ম তলার একটি কেবিনে আনার সাথে সাথে উক্ত HDU ইউনিট কর্তৃপক্ষ ৭২ ঘন্টার জন্য সিলগালা করে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়,আমি তাৎক্ষনিক ভাবে কর্তব্যরত নার্সকে জিজ্ঞাসা করলে উনি আমাকে বলেন ওখানে সংস্কারের কাজ চলছে, তাই তিন দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে,আমি নিশ্চুপ কোনো উত্তর না দিয়ে দিশেহারার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে দেখে ভাইকে উৎসাহ দিতে থাকি আর বলি ইনশাআল্লাহ ভাই আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।
এমতাবস্থায় ঠিক আজ সন্ধ্যা সাতটার সময় আমার মাথার মধ্যে আরেকটা প্রশ্ন এসে ঘুরপাক খাচ্ছে- CSTC কর্তৃপক্ষ গত ০৪ অক্টোবর ৭ম তলার HDU ইউনিটটি সংস্কারের নামে ৭২ ঘন্টার জন্য যে সিলগালা করে দেয়, তাহলেতো নিয়মানুযায়ী উক্ত HDU ইউনিট open হওয়ার কথা ০৭ অক্টোবর সন্ধ্যা সাত ঘটিকার সময়, কথাগুলোর সন্দেহর বীজ আমার মনে ধারন করার কারন হচ্ছে গতকাল আমি যখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিল পরিষোধ করার জন্য হিসাব বিভাগে যাই তখনই তারা আমাকে শেষ একদিনের বিল দেখায় ৭৮০০০ টাকা,আমি যখন উক্ত বিল দেখে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করি তখন তা গড়িমসি করে কর্তৃপক্ষ ধামা চাপা দিয়ে আমার বিল থেকে প্রায় ৫৮০০০ টাকা কম নিয়ে আমাকে বিদায় করে দেয়।
কৌতুহল বশত আমার সন্দেহ থেকে CSTC হাসপাতালের দু নাম্বারী গলা কাটা ব্যবসা,লোলুপ লিপ্সাসহ সাধারন মানুষের সাথে রক্ত চোষার যে হোলি খেলা খেলছে তা জানার জন্য ৭ম তলায় অবস্থিত HDU ইউনিটের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে আজ ০৬ অক্টোবর রাত নয়টার সময় আমার এক ছোট ভাইকে দিয়ে খবর নেওয়ার জন্য পাঠাই,
কারন – উক্ত HDU ইউনিটটিতো সিলগালা করে দেওয়া আছে, যা open করার সময় ০৭ অক্টোবর ঠিক সন্ধ্যা সাতটায়,
ছোট ভাইটি ৭ম তলার HDU ইউনিটে গিয়ে দেখে এখানে ৭২ ঘন্টার সিলগালার কোনো হদিসই নেই। তাছাড়া HDU ইউনিট টি সম্পূর্ণ open করা, এমনকি HDUর ভিতরে রোগীও কয়েক জন ভর্তি আছে।
এখন আমার প্রশ্ন? যেহেতু HDU ইউনিটটি কোভিড আক্রান্তদের জন্য বিগত কয়েক মাস থেকে চালু করা হয়েছে,সেখানে ৭২ ঘন্টার সিলগালা সহ নোটিশ দেওয়া মানেই নিশ্চই কোনো sensitivity কারন থাকতে পারে, তাহলে নির্দিষ্ট ৭২ ঘন্টার পূর্বে আজ কেন খোলা হয়েছে তা এখন আয়নার মতো পরিস্কার। রোগী একাধিক হলে ব্যবসা চলবে না হয় বন্ধ থাকবে।
৫ম তলাতো সব কেবিন, ওখানেতো কোনো HDU ইউনিটই নেই,আমার HDUর রোগীকে কি কারনে আমাকে না জানিয়ে একটি কেবিনে এনে Hyflow অক্সিজেন একটা এনে রোগীর মুখে লাগিয়ে দেয়,
যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায় ৭ম তলায় HDU ইউনিটে যেখানে আমার ভাইয়ের সর্বশেষ সময় ০৪ অক্টোবর বিকাল পাঁচ ঘটিকার সময় অক্সিজেন স্যাচুরেশান ছিলো
৯৬ /৯৭,
সেখানে ৫ম তলার কেবিনে আনার সাথে সাথে ভাইয়ের স্যাচুরেশান ৮৭/৮৮ পরের দিন ০৫ অক্টোবর সকালে দেখি ৮০/৮২,যা থেকে উনার স্যাচুরেশান আর বাড়তে দেখি নাই ক্রমই কমিয়ে আসছে অক্সিজেন স্যাচুরেশান,এভাবে উনার স্যাচুরেশান কমতে কমতে রাত ১২:৩০ মিনিটে ভাই আমার নিস্তেজ হয়ে পড়ে, নিমিষেই সব আশা আকাঙ্খা চুরমার হয়ে গেলো, এখন কথা হচ্ছে আমি আমার রোগীকে HDUতে রেখেছি রোগীকে বাঁচানোর জন্য,সেখানে সিএসটিসি কর্তৃপক্ষ কোন সাহসে রোগীর প্রতিনিধি বা অভিবাবককে না জানিয়ে অন্যএ সরিয়ে নিলো।
(মতামত বিভাগে ভুক্তভোগীদের মতামত প্রকাশ করা হয়, যার দায় ভার ভুক্তভোগীর নিজের )
Leave a Reply