নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভা নির্বাচন জমে উঠেছে। আর এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকতার হোসেন ফয়সলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। কারণ, নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মামুনুর রশিদ কিরণের বড় ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ। জনগনের ধারনা নির্বাচনে তীব্র প্রতিযোগীতা হবে।
চৌমুহনী আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা যখন নৌকা প্রতীকের চারাভিযানে ব্যস্ত, ঠিক ওই সময় খালেদ সাইফুল্লাহ মোবাইলফোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে আছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশও। এমনকী এমপির স্ত্রী বেগমগঞ্জ উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী জেসমিন আক্তারও রয়েছেন মোবাইলফোন প্রতীকের পক্ষে। তারা ভোটারদের কাছে বলছেন, ‘ফয়সল-নৌকা ঠেকাও, মোবাইল ফোন জেতাও।’ যদিও সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ দাবি করেছেন নৌকার বিরুদ্ধে কেউ যেন ভোট না করেন, সে জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, এমপির পরিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, বিএনপির প্রার্থী জহির উদ্দিন হারুনের ধানের শীষকে জেতানোর মিশনে নেমেছে এমপি পরিবার। এমপি নিজেই তার ভাইকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। যেন এলাকায় তাদের ওপরে কেউ কথা না বলতে পারে।
এই বিষয়ে জহির উদ্দিন হারুন বলেন, ‘খালেদ সাইফুল্লাহ চাকরিজীবী ছিলেন। তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ বা পূর্বপরিচয় নেই। এছাড়া, এমপি পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গেও আমার যোগাযোগ নেই। সেখানে তাদের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এটা স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডার ফল।’
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমানে পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, বিদ্রোহীরা জয়ী হোক কিংবা পরাজিত হোক, পরের কোনো নির্বাচনে আর মনোনয়ন পাবেন না। এটাই আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমপি তার বড় ভাইয়ের জন্য মনোনয়ন চেয়েছেন। না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে তার ভাইকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। যা পরিষ্কার হয়েছে এমপির স্ত্রী জেসমিন আক্তারের প্রচারাভিযানে মধ্য দিয়ে। আমি এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
আক্তার হোসেন ফয়সল বলেন, ‘দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে প্রার্থী দেওয়া ও সেই প্রার্থীর পক্ষে উপজেলা মহিলা লীগ নেত্রীর প্রচারাভিযান আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমি তাদের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ এমপি বলেন, ‘দলীয় প্রতীক নৌকার বিপক্ষে দলের কেউ যেন ভোট না করেন, সে বিষয়ে কয়েকটি বর্ধিত সভায় বলা হয়েছে।’
মোবাইলফোন প্রতীকের পক্ষে তার স্ত্রী ও অন্য ভাইয়েরা ভোট করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এমপি বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর তাদের নিষেধ করে দিয়েছি।’
মামুনুর রশিদ কিরণ বলেন, ‘খালেদ সাইফুল্লাহ কোনো দল করেন না। তবে, তিনি আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। তার কোনো বদনাম নেই।’
এ সময় নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আকতার হোসেনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে এমপি বলেন, ‘আকতার হোসেন নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর এমপি হিসেবে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। নিজের মনমতো ভোট করছেন। মেয়র হিসেবে আক্তার হোসেন কী ভালো কাজ করেছেন, তা বিবেচনা করে ভোটাররা রায় দেবেন।
Leave a Reply