মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিকদের ছবি তোলা নিয়ে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) এর নেতাকর্মীদের সঙ্গে চা বাগান শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ইস্পাহানী জেরিন চা বাগানের ম্যানেজারসহ ২০-২২ জন আহত হয়েছে। এসময় গ্র্যান্ড মোবিন রিসোর্ট নামে একটি গেস্ট হাউসের দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকার গ্র্যান্ড মোবিন রিসোর্টে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) এর কয়েকজন নেতাকর্মী ইব্রাহিম হোসেন, আবিদ হোসেন, মামুন মিয়া, মেহেদী হাসান, রাজ্জাক মিয়া, আনোয়ার হোসেনসহ ২০ থেকে ২২ জন অতিথি ইস্পাহানি চা কোম্পানির জেরিন বাগানে প্রবেশ করে চা পাতা চয়নরত নারী শ্রমিকদের ছবি তুলেন।
এসময় নারী চা শ্রমিকরা বিনা অনুমতিতে কাটা তারের বেড়া পেড়িয়ে চা বাগানে প্রবেশ ও অপ্রস্তুত তাদের ছবি তুলতে নিষেধ করেন। এতে বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) এর নেতাকর্মীরা আবারও ছবি তোলার চেষ্টা করলে নারী শ্রমিকরা বাগানের সাহেব ও বাবুদের খবর দেয়।
খবর পেয়ে বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী এসে নেতাকর্মীদের বাগান থেকে বেড়িয়ে যাবার জন্য বলে। এতে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) এর নেতাকর্মীরা মোহাম্মদ আলীকে টেনে হিচরে রিসোর্টের ভেতর নিয়ে যায়। এসময় শ্রমিকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। এরপর বিপদে প্রথা অনুযায়ী বাগানে পাগলা ঘণ্টা বাজানো হলে বাগানজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় কয়েকশ চা শ্রমিক ম্যানেজারকে উদ্ধারে মোবিন রিসোর্টে হামলা চালিয়ে দরজা জানালা ও আসবাবপত্র ভাংচুর চালায়।
পরে উত্তেজিত চা শ্রমিকদের সাথে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) এর নেতাকর্মীদের সংর্ঘষ বাঁধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০-১২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী (৪৫), স্টাফ আব্দুল কাদির (৩৫), চা শ্রমিক সুতি সাংমা (৪০), আলো মণি বাড়ই (৫৪), অনিতা গোয়ালা (৪০) ভারতী (৪০) অঞ্জলি বাপতি (২০), সন্ধ্যা সংকর (৩৫), বিশ্ব মণি (২৬), পারুল বেগম (৩০), মামুন মিয়া (২৪), ইন্দ্রজীত দাস (২২) উত্তম গোয়ালা (২৯) কে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় বাগান হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুছ ছালেক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) এর নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য রিসোর্ট থেকে বের করে এনে শ্রীমঙ্গল শহরের দিকে পাঠিয়ে দেয়। এছাড়া জেরিন চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার সেলিম রেজা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রেম সাগর হাজরা, স্থানীয় ইউপি সদস্য বিশ্বজিৎ দেব বর্ম্মা ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন।
গ্র্যান্ড মোবিন রিসোর্টের পরিচালক ইসরাত জাহান মিতু বলেন, বুধবার ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) এর নেতাকর্মীর পরিচয়ে ২২ জন অতিথি তাদের রিসোর্ট ভাড়া নেয়। রাতে বারবি কিউ পার্টি করে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে তাদের চেক আউট করার কথা ছিল। এরই মধ্যে ছবি তোলা নিয়ে বাগান শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এসময় প্রায় ৮শ’ শ্রমিক তাদের রিসোর্টে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে দরজা জানালা ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এতে করে তাদের ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। শ্রমিকদের হামলায় তাদের দুই অতিথি আহত হয়েছেন। মিতু বলেন, অতিথিদের সাড়ে ১৬ হাজার টাকা ভাড়া ও প্রায় ১৪ হাজার ৬শ ৪০ টাকার খাবারের বিল বকেয়া রেখে তারা চলে যায়। এ টাকা পাবো কি না তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
জেরিন চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার সেলিম রেজা বলেন, দুপুর ১১টার দিকে তাদের চা বাগানের পাশে একটি রিসোর্টের ২০-২২ জন যুবক বিনা অনুমতিতে বাগানে প্রবেশ করে চা পাতা চয়নরত অপ্রস্তুত চা নারী শ্রমিকদের ছতি তুলে।
বাধা দিলে তারা নারী শ্রমিকদের লাঞ্ছিত করে। পরে আমাদের একজন ম্যানেজারকে সার্টের কলার ধরে রিসোর্টে নিয়ে যায়। এ খবর বাগানে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে তাদের ম্যানেজারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেখানে কিছু গন্ডগোল হয়েছে জানিয়ে সেলিম রেজা বলেন, যা হবার হয়েছে-এনিয়ে আর বাড়াবাড়ি করতে চাই না।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, ছবি তোলা নিয়ে সংঘর্রে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। পরে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) এর নেতাকর্মীদের বের করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়। এছাড়া বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাদের নিবৃত করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান ওসি নয়ন কারকুন।
Leave a Reply