পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের হস্তক্ষেপে বালু ব্যবসায়ীদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের সৃষ্ট বিরোধটি অবশেষে জগন্নাথপুর থানায় নিস্পত্তি হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি হাজী সুন্দর আলী ও রাণীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আওয়ামীলীগ নেতা ধনেশ রায়ের মধ্যে ছিল সুসম্পর্ক। সম্পর্কের সুবাদে তারা যৌথ ভাবে বিভিন্ন ব্যবসা করে আসছিলেন। ২০১৭ সালের ২১শে মার্চ তালুকদার এন্টারপ্রাইজ এর প্রোপাইটর মৌলভী বাজার জেলার নাজিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন এর আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমতি পেয়ে চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন ও হাজী সুন্দর আলী, ধনেশ রায়সহ ১০ জন মিলে এই বালু ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসার মধ্যে মৌলভী বাজারের নাজিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন অর্ধেক ও বাকি অর্ধেকের অংশিদার হাজী সুন্দর আলী, ধনেশ রায়, আবুল কাশেম, সোহেল আহমদ, আরজান মিয়া, সুমন মিয়া, মমরাজ হোসেন, ছালেহ আহমদ, আব্দুল আলী। ১০ জনের যৌথ ব্যবসার জন্য মজুদকৃত বালু ভ্রাম্যমান আদালত আইনী জটিলতার কারনে জব্দ করেন। জব্দকৃত বালু স্থিতাদেশের জন্য সুন্দর আলী ও ধনেশ রায় গং উচ্চ আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরবতীর্তে তালুকদার এন্টার প্রাইজ ও সুন্দর আলী গং জব্দকৃত বালু স্থানান্তরের জন্য উচ্চ আদালতে পিটিশন মামলা করেন। আদালত বালু স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। আদালতের রায় পেয়ে অংশিদারগনের সম্মতিক্রমে বালু স্থানান্তর করে বিক্রয় করেন এবং অংশিদারদের মধ্যে বন্টন করেন। তাদের যৌথ ব্যবসার হিসাব-নিকাশ শেষে বিগত ২০১৭ সালে ১২ মার্চ ধনেশ রায় ও হাজি মকবুল হোসেন পৃথকভাবে সরকারের যথাযথ নিয়ম মেনে বালুর ব্যবসা করেন। চলতি বছর হাজী সুন্দর আলী ও ধনেশ রায়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। যার ফলে গত দুই মাস পূর্বে হঠাৎ করে হাজী সুন্দর আলী ২০১৭ সালের ১০ জনের যৌথ বালুর ব্যবসা বাবদ ৯৬ লাখ টাকা ধনেশ রায়ের নিকট পাবেন বলে দাবি করেন। এমন সংবাদ শুনার পরে ধনেশ রায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এ নিয়ে সুন্দর আলী স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নিকট ধনেশ রায়ের কাছে টাকা পাওনার বিষয়ে বিচার প্রার্থী হন। সামাজিক চাপে ধনেশ রায় দিশেহারা হয়ে হাজী সুন্দর আলী সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর পর এ বিষয় নিয়ে হাজি সুন্দর আলী ও ধনেশ রায় স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের স্মরণাপন্ন হন। মন্ত্রী উভয়ের বক্তব্য শুনে বিরোধটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে দায়িত্ব প্রদান করেন। দায়িত্ব পেয়ে অফিসার ইনচার্জ মো: মিজানুর রহমান গত ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার জগন্নাথপুর থানা ভবনে উভয় পক্ষকে নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করেন। জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি রেজাউল করিম রিজু, সাবেক সহ-সভাপতি হাজি আবদুল কাইয়ূম মশাহিদ, রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলার নাজিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন, বিশিষ্ঠ শালিষী ব্যক্তি আনফর উল্ল্যা, জগন্নাথপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইকবাল হোসেন ভূইয়া, থানার এস আই জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার, হাজী সুন্দর আলী ও ধনেশ রায়, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম রিপন, সাংবাদিক অমিত দেব সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা সহ দীর্ঘ আলোচনা শেষে উভয়ের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান করেন। বৈঠকের পক্ষ থেকে হাজি সুন্দর আলী ও ধনেশ রায়ের বিরোধ নিস্পত্তির বিষয়টি পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়কেও জানানো হয়েছে।
জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মিজানুর রহমান জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যবসায়িক হিসেব নিয়ে বিরোধ সৃষ্ঠি হলে পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের স্মরনাপন্ন হন। মন্ত্রী মহোদয় আমাকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দিলে আমি উভয় পক্ষ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে শান্তিপূর্ন সুরাহা করি।
Leave a Reply