কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। সেখানে উচ্চ মাত্রায় এমন হামলা সম্পর্কে নিজের দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন। তারা নাগরিকদের ওই বিমানবন্দর দিয়ে সফর না করতে পরামর্শ দিয়েছে। বিমানবন্দরের বাইরে যারা অবস্থান করছেন তাদেরকে সংশ্লিষ্ট এলাকা অবিলম্বে ত্যাগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাজধানীতে কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে কমপক্ষে ৮২ হাজার মানুষকে আকাশপথে উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটি থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের সর্বশেষ সময়সীমা ৩১ শে আগস্ট। সেই সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উদ্বেগ বাড়ছে।
উদ্ধার তৎপরতা গতি পাচ্ছে। এরই মধ্যে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সহ জি-৭ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই সময়সীমা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। অন্যদিকে তালেবানরাও এ সময়ের পরে বিদেশি সেনারা আফগানিস্তানে অবস্থান করলে পরিণতি ভোগের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
১০ দিন আগে তালেবানরা আফগানিস্তানের সরকারকে হটিয়ে দিয়েছে। তারপর গঠন করা হয়নি নতুন সরকার। সরকারবিহীন অবস্থায় চলছে আফগানিস্তান। ফলে দেশের ভিতরে খুব ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করলেও কাবুল বিমানবন্দরে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। বিমানবন্দরের ভিতরে এবং বাইরে এখনও হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছেন। তাদের আশা অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নেয়া। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের মতে, সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছে তালেবানরা। তবে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বিদেশি এবং আফগানদেরকে ৩১শে আগস্টের পরেও আফগানিস্তান ত্যাগ করতে দেবে।
বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস পাইনে বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলার বড় রকমের হুমকি আছে। এর কয়েক ঘন্টা আগে অ্যাবি গেট, ইস্ট গেট বা নর্থ গেটে যারা অপেক্ষা করছেন তাদেরকে অবিলম্বে সেখান থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃটেনও একই রকম পরামর্শ দিয়েছে। অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের তারা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পরামর্শ দিয়েছে। বলেছে, নিরাপদ স্থানে গিয়ে পরবর্তী পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করতে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল। বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলার হুমকি আছে। এ দেশগুলো এমন সতর্কতা দিলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আকাশপথে উদ্ধার অভিযান খুব শিগগিরই শেষ করা হবে। কারণ, আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হুমকি ক্রমশই বাড়ছে। বুধবার তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেছেন, ২৪ ঘন্টায় যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত ফ্লাইটে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার মানুষকে। যুক্তরাষ্ট্র এ মাস শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই কাবুলে অপারেশন সম্পন্ন করতে চায়। ওয়াশিংটনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্রই এত বড় ও জটিল মিশন সম্পন্ন করতে পারে। তালেবানরা প্রকাশ্যে এবং প্রাইভেটভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা বলেছে, ৩১ শে আগস্টের পরেও মার্কিনিদের, তৃতীয় কোনো দেশের অথবা ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের নিরাপদে দেশ ছাড়তে দেবে। তিনি আরো বলেন, এই উদ্ধার অভিযানের সময় যারা আফগানিস্তান ছাড়তে পারছেন না, তাদেরকে সব সময়ই আফগানিস্তান ত্যাগে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
এখনও আফগানিস্তানে মার্কিন নাগরিকের সংখ্যা হতে পারে ১৫০০। তারা কোথায় আছেন তা শনাক্তে রুদ্ধশ্বাস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। হেলিকপ্টার এবং পদাতিক বাহিনী ব্যবহার করে ওইসব মার্কিনিকে শনাক্তে গোপন অপারেশন চালাচ্ছে সিআইএ এবং মার্কিন সেনারা। যুক্তরাষ্ট্রের এবং অন্য দেশের কর্মকর্তারা এ তথ্য দিয়েছেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে। একই অপারেশন কাবুলের ভিতরে এবং বাইরেও চলছে বলে জানানো হয়েছে।
পেন্টাগন বলেছে, এখনও মার্কিন বিমানে করে উদ্ধারের জন্য কাবুল বিমানবন্দরে অপেক্ষায় আছেন ১০ হাজার মানুষ। কিন্তু হাজার হাজার আফগানের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ। তারা দেশ ছাড়তে চান। কিন্তু বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারেননি। বিবিসির প্রতিনিধিরা বলছে, এমন বহু মানুষকে বিমানবন্দরের গেট থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে তালেবানরা।
Leave a Reply