বাংলাদেশ থেকে নতুন করে দশ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান করবে সিঙ্গাপুর। এ লক্ষ্যে দেশটির বাংলাদেশ মিশন প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক ভিসা ইস্যু করছে। অন্যদিকে ইউরোপের দেশ রোমানিয়াও বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার কর্মী নিতে চায়।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছু কিছু সুখবর পাচ্ছি। আজকে সুখবর হলো- সিঙ্গাপুর থেকে খবর পেলাম, তারা অতিরিক্ত ১০ হাজার লোকের চাকরির বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। এটা সুখবর, আমরা এটা শুরু করব। আমি এটা সবার সঙ্গে শেয়ার করলাম। আমাদের মিশন এ তথ্য দিয়েছে।’
সিঙ্গাপুর মিশন এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সিঙ্গাপুর মিশন প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক ভিসা ইস্যু করছে। সিঙ্গাপুরে আইপিএ ওয়ার্ক ফারমিট যেটা সেটা আমাদের মিশন ইস্যু করে। আমরা প্রতিদিন তাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী কাজ করছে। যেহেতু এ অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে, শুনেই আমরা শুরু করে দিয়েছি।’
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়ে মোটামুটি অভিযোগ থাকে না বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
অন্যদিকে গতকাল (২১ ফেব্রুয়ারি) ইউরোপের দেশ রোমানিয়া থেকে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার খবর পান বলেও জানান মোমেন।
রোমানিয়া প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘কালকে খবর পেলাম, ওখানে আরও দুই হাজার জনের মতো নেবে। ওখানে অনেক নেবে, কেননা ওখানে জামার্নি, ফ্রান্স থেকে ওরা হালাল গোশসত পাঠায়। তারা সে ধরনের লোক খুঁজতেছে, এটা খুবই ইন্টারেস্টিং (মজার)। আমরা আশা করছি, সেখানেও কিছু লোকজন পাঠাব।’
রোমানিয়ায় বাংলাদেশ নতুন মিশন খুলেছে। সেখানে প্রায় এক হাজার ৪০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রোমানিয়াতে নতুন মিশন খুলেছি। সেখানে আমরা প্রথম কিছু লোক নিয়োগ করেছি। প্রথমে ২০০ জন, তারপর ১ হাজার ২০০ জন।’
ইউরোপ মহাদেশের আরেক দেশ ক্রোয়েশিয়াতেও অল্প সংখ্যক কর্মী পাঠানো হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সময় বাংলাদেশিকর্মীরা যেকোনো পরিবেশ বা কাজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে বলে তাদের প্রশংসা করেন মোমেন।
কোভিডের শুরুর দিকে এবং গত বছরজুড়ে বাংলাদেশিকর্মীদের নিয়ে সরকার চিন্তায় ছিল জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘কোভিডের সময় আমরা যতেষ্ঠ চিন্তায় ছিলাম। কারণ আমাদের অনেক লোক প্রবাস থেকে স্বদেশে ফেরত আসছিলেন। হিসেব করে দেখছিলাম আমাদের অধিকাংশ প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছিলাম যেন আমাদের লোকগুলো বাইরে থাকতে পারে, ঝামেলা না হয়। আমি প্রবাসীদের অনুরোধ করেছি, এ আপদকালীন পারলে থেকে যান। এরপর সুবর্ণ সময় আসবে।
‘আমরা আমাদের সব মিশন প্রধানকে বলেছি, আমাদের লোকের গেইনফুল এমপ্লয়মেন্টের জন্য আপনারা চেষ্টা করেন।’ বক্তব্যে যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিদেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে নারী কর্মীদের নির্যাতনের প্রসঙ্গ তোলেন মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায় ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ নারী প্রবাসে কাজ করে। সবচেয়ে বড় হচ্ছে, নারীদের আয়ের শতকরা ৯০ ভাগ দেশে পাঠান। সৌদি আরবে গৃহস্থালীতে কাজ করে তারা বেশি নির্যাতনের শিকার হন, সেটা শতকারা এক ভাগ। সেখানে আমাদের তিন লাখ ২০ হাজারের মতো নারী আছে। দেশটির বাসাবাড়ি ছাড়া অন্যত্র যারা কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এ দুর্ভাগ্য ঘটে। আমরা সেজন্য জেদ্দায় আমাদের মিশনগুলোতে আশ্রয়ন তৈরি করেছি, সেখানে খবর পেলেই আমরা নিয়ে রাখি।’
সম্প্রতি বাংলাদেশি নাগরিক আবিরন বেগম হত্যা মামলায় সৌদি আরবে গৃহকর্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। একই সঙ্গে ওই বাসার কর্তা বাসেম সালেমকে ৩ বছর ২ মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হয়েছে। এ দম্পতির ছেলে ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে কিশোর উন্নয়নকেন্দ্রে সাত মাস রাখার রায় দিয়েছেন আদালত।
এ বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশি নারীকর্মীদের ওপর অত্যাচার কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভালো খবর হচ্ছে, পরপর দুটো কেইস আমরা শক্ত হাতে নিয়েছি। বিচারটা খুব কড়া হয়েছে। মালিক মহিলাসহ বাকি যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা আমার আশা, এর পরিপ্রেক্ষিতে নারী নির্যাতনের পরিমাণটা অনেক কমবে। ওখানে ন্যায়বিচার খুব ভালো, ন্যায়বিচার পাওয়া যায়। আমার আশা নারীদের ওপর অত্যাচার কমবে।
Leave a Reply