দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছ। পানিবন্দী মানুষেরা অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করছেন। নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে অনেকের জায়গাজমি বসতবাড়ি। ফসলি খেত ডুবে গেছে। খাদ্য সংকট, থাকার সমস্যাসহ তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম: কয়েক দিন ধরে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায়, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে চরসহ নিচু এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার পানিবন্দী মানুষ। এদিকে চলমান বন্যায় জেলায় প্রায় ১৬ হাজার চার শ ৭ হেক্টর জমির রোপা আমন ও দুই শ ৭০ হেক্টর জমির সবজি খেত, এক শ হেক্টর জমির বীজতলা দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে থাকায়, বেশির ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও কিছুটা বাড়তে পারে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যাকবলিতদের জন্য ২৮০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জামালপুর: জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পনেরো হাজার মানুষ। পানির নিচে তলিয়ে গেছে অনেক ফসলি জমি।
মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের চারটি চরগ্রামের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকি মুখে পড়েছে ওই ইউনিয়নের কুঠিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পটি। বালির বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর জানান, বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হলেও মধ্য রাতে বাঁধের দেড় শ মিটার ভেঙে ওই ইউনিয়নের ভাবনচুর, দক্ষিণ সোনাখুলি, ভেন্ডাবাড়ি ও কুটিপাড়া গুচ্ছগ্রাম (আশ্রয়ণ প্রকল্প) প্লাবিত হয়।
তলিয়ে যায় অসংখ্য আবাদি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে তিন মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা বুধবার বিতরণ করা হবে।’
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের পাঁচ উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা পানি পরিমাপক আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের পাকুরতলা ও জালালপুর গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙনে ক্ষতির বিপদের মুখে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
তাদের অনেকের যাওয়ার জায়গা না থাকায় তারা খোলা আকাশের নিচে পলিথিনের ছাউনি তৈরি করে বাস করছে। এখনো তাদের কাছে কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আ. রহিম জানান, জেলার বন্যা কবলিত ৫ উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্তদের ১৩৯টি কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ উপজেলায় ১২৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply