সাভারের আশুলিয়ায় বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে বিবাদীকে ডেকে টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। এ অভিযোগে ওই কর্মকর্তাকে আশুলিয়া থানা থেকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন খোদ অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মো. ফরিদুল আলম। তবে টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করার কথা অস্বীকার করেছেন।
এর আগে আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় স্থানীয় সাকিব ভূঁইয়ার (২৮) বিরুদ্ধে এক পোশাককর্মীকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত সাকিব ভূঁইয়া আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকার শাহ আলম ভূঁইয়ার ছেলে।
ভুক্তভোগী নারীর এজাহার থেকে জানা যায়, তিন-চার মাস আগে অভিযুক্তের সঙ্গে পরিচয় হয় ভুক্তভোগীর। এরপরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। গত ৬ মার্চ সর্বশেষ শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর থেকে বিয়ের কথা বললে নানা টালবাহানা করে ঘোরাতে থাকেন অভিযুক্ত যুবক।
ভুক্তভোগী নারী থানায় অভিযোগ করলে সেই অভিযোগের তদন্তের ভার পড়ে আশুলিয়া থানার এসআই মো. ফরিদুল আলমের ওপর। পরে অভিযুক্তের সঙ্গে আঁতাত করে ঘটনাটি মীমাংসা করেন তিনি।
গত ২১ মার্চ থানায় প্রথমবার অভিযোগ জানান ভুক্তভোগী নারী। পরে তাঁকে থানায় ডেকে মীমাংসা করা হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার আবার তাঁকে ডেকে থানায় মামলা গ্রহণ করে আশুলিয়া থানা-পুলিশ (মামলা নম্বর-২৮)। এমনকি অভিযান চালিয়ে এদিন অভিযুক্ত সাকিব ভূঁইয়াকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
মীমাংসা করার পরও অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে ওই নারী বলেন, ‘ঘটনার মীমাংসা করা হয়েছিল ঠিক। এসআই ফরিদ ও আরও কয়েকজন স্থানীয় লোক থানায় বসেই আমাকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসা করায়। তাঁরা বলেন, মামলায় গেলে অনেক ঝামেলা অনেক খরচ, তুমি মীমাংসা করে নাও। এ বিষয়ে আমার আর কোনো অভিযোগও ছিল না। সেই টাকা থেকে আমার কাছে বিভিন্ন খরচাপাতির কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন উপস্থিতরা। আমি ৪০ হাজার টাকা টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে চলে আসি।
এরপর থেকে আমি আমার মতো এলাকায় বসবাস করে আসছিলাম। আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইনি। কিন্তু হঠাৎ করে এসআই ফরিদ আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, “বোন আমার চাকরিটা বাঁচাও, তুমি থানায় এসে একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে যাও।” পরে আমাকে থানায় নিয়ে মামলা গ্রহণ করে। আমি যখন মামলা করতে চেয়েছি তখন আমার মামলা নেওয়া হয়নি। আর পরে আমি যখন সব ভুলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চেয়েছি তখন আমাকে এই পথে আনা হলো। আমাকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি সাকিবকে এখনো ভালোবাসি, তাই আর চাইনি সে ঝামেলায় থাকুক। কিন্তু এখন তো তাঁদের পথে এসে আমাকে মামলা পরিচালনা করতে হবে। আমি তো এখন এসব চাইনি। আমি এ টাকা নিয়েও খুব অস্বস্তিতে আছি। আমি এ টাকা ফেরতও দিতে চেয়েছিলাম।’
আজ মঙ্গলবার এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই ফরিদুল আলম বলেন, ‘আজ থেকে আমি পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছি। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমি, টাকা পয়সা নিয়ে কোনো মীমাংসা করা হয়নি। আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
তাহলে কেন আপনাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার সিনিয়র কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।’
জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ মীমাংসার বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদারের কাছে বিষয় জানতে চাইলে বলেন, ‘যে কোনো সময় যে কোনো পুলিশ বদলি বা ট্রান্সফার হতে পারে। এটা এ ধরনের বিষয় তো না।’
ওই পুলিশ কর্মকর্তার বদলি শাস্তিমূলক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। এটা শাস্তিমূলক বিষয় তো না। এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়।
Leave a Reply