কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের রাবাইটারী এলাকার ছামিরন বেগম (২৪) এর সাথে নাগেশ্বরীর গোপালপুর এলাকার লাল মিয়া (২৮) গত তিন বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিবাহ করে।
অভিযুক্তের পরিবার তাদের বিবাহ মেনে না নেওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী নাগেশ্বরী থানাধীন রায়গঞ্জ তেতুলতলা নামক স্থানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তিন মাস হতে বসবাস করে আসছিলো।
গত (২২ অক্টোবর) ছামিরন তার বাবার বাড়িতে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। জন্মের পর হতে তার স্বামী উক্ত সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করতে থাকে। এমতাবস্থায় ছামিরন প্রতিবাদ করলে গত শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) আনুমানিক বিকাল ৪ ঘটিকার সময় স্বামী লাল মিয়া পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে রংপুর এর উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরে সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ ঘটিকার সময় তিস্তা ব্রিজের মাঝখানে স্বামী লাল মিয়া মোটরসাইকেল থামিয়ে নবজাতককে তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর কথা বলে বিরতি নেয়।
দুধ খাওয়ানোর এক পর্যায়ে ছামিরনের স্বামী লাল মিয়া আকস্মিকভাবে নবজাতককে তার কোল হতে জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্রিজের উপর থেকে তিস্তা নদীতে ফেলে দিয়ে সে দ্রুত মোটরসাইকেলযোগে রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়।
তখন ছামিরন আর্তনাদ ও কান্নাকাটি করে পথচারীদের ঘটনাটি জানান।
পরে উপস্থিত লোকজন কাউনিয়া ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিলে কাউনিয়া হইতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যবৃন্দ নবজাতকে খোঁজাখুজি করেও কোনো সন্ধান পায় নি। পরবর্তীতে ছামিরন হতাশাগ্রস্থ মনে বাড়ি ফেরার পথে তার খুনী স্বামীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে ন্যায্য বিচার পেতে সে মোবাইলে সুকৌশলে তার স্বামীকে তার নিকট আসতে বলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) আনুমানিক ১০.৩০ ঘটিকার সময় ঘাতক লাল মিয়া ছামিরনের নিকট আসলে ছামিরন কৌশলে তাকে সঙ্গে নিয়ে কচাকাটা থানাধীন বলদিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত শাহীবাজার গ্রামে তার ভাইয়ের শ্বশুর আব্দুল কুদ্দুস এর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে কচাকাটা থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়।
পরে কচাকাটা থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়ে ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লাল মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। উক্ত ঘটনায় একটি নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু করা হয় এবং আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমীন বলেন, পিতা কর্তৃক নিজ নবজাতক পুত্র সন্তানকে হত্যা এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। এই বিষয়ে নাগেশ্বরী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে এবং ঘাতক পিতা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
Leave a Reply