বন্ধ করে দেওয়া রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। অর্থ মন্ত্রণালয় বন্ধ ২৬টি পাটকলের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮টি পাটকলের শ্রমিকদের পাওনা ১ হাজার ৭৯০ কোটি ৫২ লাখ টাকা ছাড় করেছে বলেও তিনি জানান। বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, এই টাকা শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এ প্রক্রিয়ায় আগামী মাসের মধ্যে সব মিলের শ্রমিকদের পাওনা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীজুড়ে পাটের কদর ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটচাষিরা কাঁচা পাটের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। চলতি পাট মৌসুমে কাঁচা পাটের গড় দর ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। এর ফলে পাটচাষিরা ভবিষ্যতে অধিক পরিমাণে পাট চাষে আগ্রহী হবেন। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে পাট খাতের অবদান আরও সুসংহত হবে বলে আশা করা যায়।
পাটমন্ত্রী আরও বলেন, বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি সার্বিকভাবে পাট খাতকে পুনরুজ্জীবিত এবং মিলগুলোকে উপযুক্ত মডেলে আধুনিকায়ন ও পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে মিল ও বিজেএমসির অন্যান্য সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে অনুসরণীয় কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং বিজেএমসির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় জনবলের যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে সুপারিশ প্রদানকল্পে সরকার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি পৃথক কমিটি গঠন করেছে। আশা করা যায় যে, বর্ণিত কমিটি দুটির সুপারিশের আলোকে বন্ধ ঘোষিত মিলগুলো নতুন আঙ্গিকে পুনরায় চালু হবে এবং এভাবে পুনরায় চালু হওয়ার পর মিলে পূর্বের অভিজ্ঞ শ্রমিকরা আবারও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। পাটমন্ত্রী জানান, ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিল ও খুলনার ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হবে।
ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এসব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারীর চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় তার আগেই। এসব পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী শ্রমিকের পাওনা বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পর থেকে অবসরে যাওয়া ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে তিন অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছিল শুরুতে। শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করার নির্দেশনাও প্রদান করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার করিম জুট মিলসের ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম শুরু করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। শ্রম আইন, ২০০৬-এর বিধান অনুযায়ী ৬০ দিনের নোটিসের পরিবর্তে কাজ করা ছাড়াই পাটকল শ্রমিকদের জুলাই এবং আগস্ট মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন-বিজেএমসি।
Leave a Reply