নোয়াখালী জেলা শহরে রোববার আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও ধাওয়া চলাকালে এক পক্ষের তিন তরুণের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর হাতের অস্ত্র দিয়ে একাধিক প্রতিপক্ষের দিকে গুলি ছোড়েন এবং অন্য দুজন পাল্টা প্রতিরোধে অস্ত্র নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান।
সোমবার বিকেলের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে অস্ত্র নিয়ে গুলি করা ও দৌড়ানোর দৃশ্যটি দেখা যায়।
তবে ওই অস্ত্রধারীদের কাউকে নিজেদের লোক বলে স্বীকার করেনি সংঘাতে জড়িয়ে পড়া আওয়ামী লীগের বিবাদমান পক্ষগুলো। বরং তারা এ জন্য পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করেছে এবং ভিডিও চিত্র দেখে ওই অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে।
এদিকে শহরে এভাবে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি ছোড়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান সড়কের আশপাশের ব্যবসায়ীরাও। তাঁরা বলেছেন, রাজনৈতিক সংঘাতে সন্ত্রাসীরা এভাবে অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুড়লে তা থেকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষও রেহাই পাবে না।
এ বিষয়ে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন সোমবার রাত ৯ টায় গণমাধ্যমকে বলেন, অস্ত্র নিয়ে গুলি করা ও অস্ত্র হাতে দৌড়ানোর একটি ভিডিও চিত্র তিনি পেয়েছেন। ভিডিও দেখে অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৩৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি শহরের জামে মসজিদ মোড়ের দক্ষিণ পাশের সড়কের পশ্চিম দিকের কোনো একটি বহুতল ভবন থেকে ধারণ করা। ভিডিওর শুরুতে দেখা যায়, ১৪-১৫ জনের একদল তরুণ দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অস্ত্রধারী তিন তরুণ। যাঁদের মধ্যে সাদা জামা পরা একজন প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য একাধিক গুলি ছোড়েন। বাকি দুজনের একজন রঙিন টি-শার্ট পরা, অন্যজন খয়েরি জামা পরা। গুলি করার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই প্রতিপক্ষের ধাওয়ার মুখে তাঁরা অস্ত্র হাতে দৌড়ে দক্ষিণ দিকে (পৌর বাজার) পালিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের জামে মসজিদ মোড় এলাকায় পাল্টাপাল্টি হামলা ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটে নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিহাব উদ্দিনের (শাহিন) অনুসারীদের মধ্যে। এর মধ্যে সাংসদ একরামুল করিমের সমর্থকেরা ছিলেন জামে মসজিদ মোড়ের উত্তর দিকে, শিহাব উদ্দিনের অনুসারীরা ছিলেন জামে মসজিদের দক্ষিণ দিকে জিলা স্কুলের সামনের সড়কে। ভিডিওতে দেখা যায়, অস্ত্রধারীরা গুলি ছোড়ার পর দক্ষিণ দিকে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘গুলি কে করছে আমি জানি না। আমাদের লোককে ওসি সাহেদসহ পুলিশ গুলি করতে করতে তাড়া করে আমার বাসার সামনে নিয়ে আসে। গুলির ওই ভিডিও জেলা পুলিশ সুপার তাঁকে পাঠিয়েছেন শনাক্ত করার জন্য। তাঁর ধারণা, অস্ত্রধারীরা ফেনীর দাগনভূঞা ও সোনাগাজী এলাকার। প্রতিপক্ষ আমাদের দলের বদনাম করার জন্য এঁদের আনতে পারে। আমি তাঁদের কাউকে চিনি না। আমাদের লোকজন তো পিটুনি খেয়ে হাসপাতালে।’
অস্ত্রধারী তরুণের গুলি ও অস্ত্র নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিওর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম সোমবার রাত ৯টা ২১ মিনিটে জানান, তিনি ভিডিওটি পাননি। উল্টো জানতে চান, প্রতিবেদকের কাছে ভিডিওটি আছে কি না? প্রতিবেদক সুধারাম থানার ওসি ভিডিওটি পেয়েছেন জানালে পুলিশ সুপার বলেন, তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলবেন। বিষয়টি তিনি দেখছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের জামে মসজিদ মোড় এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, প্রকাশ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর এভাবে অস্ত্র নিয়ে গুলি করার দৃশ্য দেখে তাঁরা ভীতসন্ত্রস্ত। কারণ, এভাবে অবৈধ অস্ত্রের অবাধ ব্যবহার হতে থাকলে শহরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ আর নিরাপদ থাকবেন না।
Leave a Reply