স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে নিজ ঘরে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার ৩৩ দিন পর নয়জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। রোববার (৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে নির্যাতিতা গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মধ্যযুগীয় এই ঘটনাটি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের।
এদিকে ভিডিওতে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় দেলোয়ারসহ তার সহযোগীরা ওই নারীর গলায় পা রেখে এলোপাতাড়ী মারধর করছে। কেউ বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করছে। স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান গণধর্ষণের পর ফেসবুকে ভিডিও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তারা ফের ভিডিও করেছে কিন্তু পরিবারটি নীরিহ হওয়ায় ও নির্যাতনকারীরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকায় ভয়ে প্রকৃত সত্য প্রকাশ করছেন না। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. জাফরউল্লাহ জানান, তারা আ’লীগের কেউ না। তাদের চিনেন না। এতদিন দেলোয়ার বাহিনীর নাম শোনেননি। অন্যদিকে দলটির অপর কয়েকজন নেতার দাবি দেলোয়ার ছাত্রলীগের পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। আ’লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। যেকারণে তাদের বিরুদ্ধে বহু মামলা থাকা সত্বেও পুলিশ গ্রেফতার করে না।
এদিকে ভিডিও ভাইরালের পর পুলিশ মাঠে নেমেচে। এখন পর্যন্ত দুই দফায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এক আসামিকে রোববার বিকেল ৪টায় এবং অপর আসামিকে রাত ১১টায় একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে প্রধান অভিযুক্ত দেলোয়ার এখনো আটক হয়নি।
তারা হলো একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. আব্দুর রহিম (২০) ও একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহ (৪১)।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.হারুন উর রশীদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পুলিশের ৫টি ইউনিট ৭ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে।
অপরদিকে, ঘটনার পর ভয়ে বাড়িছাড়া নির্যাতিতা গৃহবধূকে সদর উপজেলার মাস্টার পাড়ার তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।
ওসি মো. হারুন উর রশীদ জানান, পুলিশ অভিযুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। গ্রেফতার আসামিদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা জানান, আমি নিরীহ লোক। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো কথা বলার সাহস পাই না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই।
এ জঘন্য ঘটনার সাথে জড়িতদের রাতের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানান একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম ভুঁইয়া।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে এবং নির্যাতিতা পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দিতে জেলা পুলিশের ৫টি ইউনিট মাঠে কাজ করছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় চলছে।
Leave a Reply