নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল সুবর্ণচর উপজেলার দুর্যোগ কবলিত মানুষ, তাদের পরিবার ও গৃহপালিত প্রাণীর জীবন রক্ষা এবং মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য নির্মিত হয়েছে দুটি মুজিব কেল্লা।
রোববার (২৩ মে) বেলা ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেল্লা দুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ দুর্যোগকালীন উপকূলীয় এলাকার মানুষের দুশ্চিন্তা দূর করবে মুজিব কেল্লা। এতে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
সূত্রে জানা গেছে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সুবর্ণচরের আমান উল্যা ইউনিয়নের চর দরবেশপুর গ্রামে ২ কোটি ২৫ লাখ ৮১ হাজার ১৭ টাকা ও চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর কাজি মোকলেস গ্রামে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ১২৫ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি মুজিব কেল্লার উদ্বোধন করেছেন।
নির্মাণ শেষ হওয়া এবং নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এসব কিল্লা আট হাজার বর্গমিটার আয়তনের। সাধারণ কৃষি জমির চেয়ে প্রায় ১১ ফুট উঁচুতে পুরনো মাটির এ কেল্লার ওপর নির্মিত ভবনের প্রথম ফ্লোরে ও ছাদে ৫০০ পরিবারের মানুষ একত্রে আশ্রয় নিতে পারবে। গবাদি পশুর জন্য ৫৫৮ বর্গমিটারের শেড রয়েছে। থাকছে বাথরুম সুবিধাসহ সুপেয় পানির ব্যবস্থা। এছাড়া ভবনে থাকছে বিদ্যুৎ ও সোলার সিস্টেম সুবিধা। এতে স্বাভাবিক সময়ে এসব কেল্লায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, খেলার মাঠ ও হাট-বাজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
সুবর্ণচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ বলেন, মুজিব কেল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে প্রকল্পের নির্দেশনা অনুসারে গুণগত মান অক্ষুণœ রেখে নির্মাণে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করেছি।
সুবর্ণচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম ইবনুল হাসান ইভেন বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা বন্যাপ্রবণ ও নদীভাঙন এলাকা। দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসে বন্যাপীড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মুজিব কিল্লা বিশাল ভূমিকা রাখবে। এছাড়া মুজিব কেল্লায় স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষা কার্যাক্রম পরিচালনা ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান খান বলেন, নোয়াখালী উপকূলীয় জেলা, ঘূর্ণিঝড়ে এখানে অনেক ক্ষতি হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে নোয়াখালী জেলায় পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও আশ্রয়ন প্রকল্প হিসেবে সুবর্ণচর উপজেলায় দুটি মুজিব কেল্লা স্থাপন করা হয়েছে।
নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকার এখন সারা বিশ্বের কাছে একটি রোল মডেল। নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় অঞ্চল সুবর্ণচরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে দুটি মুজিব কেল্লার শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। এ জন্য আজ উপকূলবাসীর মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। নোয়াখালীবাসীর পক্ষ থেকে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, মুজিব কিল্লাগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবন ও সম্পদ হানির সংখ্যা কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় দুটি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দুটি, নোয়াখালী সদর উপজেলায় একটি করে মোট পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রসহ সুবর্ণচর উপজেলায় দুটি মুজিব কেল্লা এবং জেলা সদরে একটি জেলা ত্রাণ গুদাম ও তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এসবের নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে প্রকল্পের নির্দেশনা অনুসারে গুণগত মান অক্ষুণœ রেখে নির্মাণে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করেছি।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জাফর উল্লা, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনাম সেলিম, জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার সহ প্রমূখ।
Leave a Reply