তিন মাসে টানা তিনবার বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেটের কৃষিখাত। কৃষিখাতে ক্ষতির এই প্রভাব বিশেষ করে কৃষি নির্ভর সুনামগঞ্জ অঞ্চলকে ভাবিয়ে তোলেছে। বানের পানিতে যারা গোলার সবটুকু ধান হারিয়েছেন এখন তারা চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন।
বন্যার থাবায় সিলেট অঞ্চলের ৮৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। বেসরকারি হিসেবে এই ক্ষতির পরিমাণ ৮-৯ শ কোটি টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছে এই ক্ষতি কম-বেশি ৫-৯ শ’ কোটি হতে পারে। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে ধাক্কা সামলে উঠতে পারেন সেজন্য তাদের পুনর্বাসনের আওতায় আনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ৮৫ হাজার ৪৫৬ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই ধানের ৬৩ হাজার ৪১৭ হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়াও ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর বোনা আমন এবং ৭ হাজার ৩৩৯ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৪ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে রয়েছে ২৬ হাজার ২৭৯ হেক্টর আউশ ধান এবং ২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি।
সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ হাজার ৮০৩ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৪০৩ হেক্টর আউশ ধান এবং ২ হাজার ৪০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি।
এ ছাড়াও মৌলভীবাজার জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৩৯ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে ১১ হাজার ৬৩৭ হেক্টর আউশ ধান, ৩৬৫ হেক্টর বোনা আমন এবং ৭৩৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি রয়েছে। তা ছাড়াও
হবিগঞ্জে ক্ষতির মুখে পড়েছে ২৯ হাজার ৯৭০ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে আউশ ধান ১৪ হাজার ৯৮ হেক্টর, বোনা আমন ১৪ হাজার ৩৩৫ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি ১ হাজার ৫৩৭ হেক্টর রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মে মাসের বন্যায় শুধু ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছিল। তবে ১৫ জুনে আঘাত হানা বন্যায় ফসলি জমির সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য কৃষকের গোলার ধানও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, উপর্যুপরি বন্যায় সিলেটের কৃষি খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আমাদের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৫-৬ শ কোটি টাকা। তবে অনেক কৃষকের গোলার ধান ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে। এগুলোর প্রকৃত হিসাব পাওয়া খুব কঠিন।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে প্রায় ৩০ হাজার কৃষককে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হয়েছে। সামনে আরও কৃষক এর আওতায় আসবেন। পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply