বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে যে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতারা ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি ও আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া সে সে ক্ষেত্রে সফল। এজন্যই আজকে এই গায়ের জোরের সরকার ইতিহাসকে পাল্টিয়ে দিতে চায়।’
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইতিহাসকে পাল্টিয়ে দিতে চায় কারণ তারা জানেন, বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানলে সেখানে দলটি লজ্জ্বায় ছাড়া কিছু পাবে না। আওয়ামী লীগের কোনো বক্তব্য থাকবে না। তাই তারা (আওয়ামী লীগ) জোর করে আজকে ইতিহাসের পাতা থেকে সত্যকে মিথ্যা দিয়ে, ন্যায়কে অন্যায় দিয়ে ঢেকে দিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করছে।’ এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে অবশ্যই বিএনপিকেই দায়িত্ব নিতে হবে’ উল্লেখ করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান তিনি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নাই, যেটুকু আছে গণতন্ত্রের লেবাসে একটা কর্তৃত্বাবাদী স্বৈরতন্ত্র দেশে চালু আছে। এজন্য আজকে তিনটি এজেন্ডা আমাদের সামনে এসে পড়েছে। একটা সংগঠন, আরেকটা হলো আন্দোলন এবং নির্বাচন। সংগঠনের কাজ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করছেন। আমরা চেষ্টা করছি সকলে তার সাথে সহযোগিতা করে তার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য আমাদেরকে জাতীয় ঐক্যের প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে এবং দেশের সকল গণতন্ত্রমনা, গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে যারা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বদ্ধপরিকর তাদেরকে একসাথে করতে হবে। পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী সকলকে নিয়ে এক ঐক্যের প্লাটফর্ম তৈরি করে এই আন্দোলনের সূচনা করতে হবে। এই আন্দোলন হবে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য। এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এই আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। একটা কথা বলি, আওয়ামী লীগ স্বাধীন দেশে ফেরত এসে স্বাধীনতার গল্প শুনেছে এদেশ কীভাবে স্বাধীন হয়েছে, কারা স্বাধীন করেছে, কে স্বাধীন করেছে- সেই গল্প তারা শুনেছে। কিন্তু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ইতিহাস রচনা করেছেন। স্বাধীনতার ইতিহাসের নায়ক এককভাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তার পরে সঙ্গিসাথী ও অন্যান্য দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় দেশের গণমাধ্যম ও মিডিয়া সরকার নিয়ন্ত্রণ করে সরকার মিথ্যাচার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আজকে মোছামুছির এই সন্ধিক্ষণে একদিকে মোছা একদিকে গড়া। একদিকে গড়লে পাহারা দিতে হয়। কারণ, কী ভাঙা যায় তার ছবি বানায় দেয়- এই মামলাও আমাদের বিরুদ্ধে কম না। সেই কারণেই বলছি এমন একটি নাম ইতিহাসে জিয়াউর রহমান, যার ছবি পাহারা দিতে হয় না। আর অন্যের ছবি পাহারা দিতে হয়। সেই মান্না দে‘র সেই প্রসিদ্ধ গানটি বলে শেষ করতে চাই-কাগজে লিখো নাম, যে নাম ছিড়ে যাবে, পাথরে লিখো না না, যে নাম ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লিখো নাম, যে নাম চিরদিন রয়ে যাবে। এই নাম কেউ মুছে ফেলতে পারবে না মানুষের হৃদয়ে থেকে।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ থাকার কারণে ভার্চুয়াল সভায় অংশ নিলেও বক্তব্য রাখেননি।
Leave a Reply