সাভারের আশুলিয়ায় ছুটি না দেয়ায় স্বামীর মৃত্যুর অভিযোগ করেন স্ত্রী। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় স্বামীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে লাশ নিয়ে তার কর্মস্থলে অবস্থান করছেন রহিমা নামের দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূ।
রোববার সকাল থেকেই তিনি আশুলিয়ার পলাশবাড়ি এলাকায় অবস্থিত স্বামীর কর্মস্থল স্কাইলাইন কারখানার সামনে অবস্থান করছেন। এর আগে ভোর রাত ৪টার দিকে নিজ ভাড়া বাসার টয়লেটে স্ট্রোক করে মারা যান রহিমার স্বামী মোঃ নজরুল ইসলাম (৫৫)।
সে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানা এলাকার বাসিন্দা এবং ১২ বছর ধরে স্কাইলাইন নামক তৈরী পোশাক কারখানার গাড়ি চালাতেন বলে দাবি করেন তার স্ত্রী রহিমা।
ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে অবস্থান নেয়া রহিমা জানান, গত কয়েক মাস ধরে তার স্বামীর বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হচ্ছিল। এজন্য চিকিৎসকের কাছে গেলে তার বুকে পানি জমেছে জানিয়ে প্রথমে ১৫ দিন বিশ্রামে থাকতে বলা হয়। ঘটনাটি জানিয়ে নজরুল ইসলাম কারখানায় ছুটি চাইলে তাকে ছুটি না দিয়ে কাজ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে পুনরায় ছুটির আবেদন করেন।
কিন্তু এ্যাডমিন ম্যানেজার আনিস তাকে ছুটি না দিয়ে উল্টো অপমান করে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন। এদিকে শনিবার রাতেও কারখানায় কাজ করে বাসায় ফেরার পর রবিবার ভোর ৪টার দিকে বাসার টয়লেটে স্ট্রোক করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নজরুলের।
নিহত নজরুলের স্ত্রী রহিমার অভিযোগ, যথাসময়ে কারখানা থেকে আমার স্বামীকে ছুটি দেওয়া হলে ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারতাম। এছাড়া চিকিৎসক বিশ্রাম নিতে বলেছিলো সেটা করা হলেও হয়তো আমার স্বামী বেঁচে থাকতে পারতেন।
কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় যেহেতু বিনা চিকিৎসায় আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে তাই এ মৃত্যুর দায় কারখানা কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই এড়াতে পারে না। এজন্য আমি বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্বামীর লাশ নিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান করছি। এভাবে যেন বিনা চিকিৎসায় আর কোন শ্রমিক মারা না যায় এবং কোন নারী যেনো বিধবা না হয়, কোন সন্তান যেন এতিম না হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্কাইলাইন কারখানাটির প্রশাসন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আরাফাত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হঠাৎ অসুস্থ হয়েই তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া রহিমা কারখানার সামনে আসার পরে আমরা তার স্বামী নজরুলের সকল পাওনাদি বুঝিয়ে দিয়েছি।
শ্রমিক নেতা সারোয়ার হোসেন বলেন, আমি সকাল থেকেই স্কাইলাইন কারখানার সামনে ছিলাম এবং রহিমার সাথে কথা বলে তার কাছে থাকা সমস্ত কাগজপত্র দেখে বুঝতে পারি কারখানা কর্র্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ও অমানবিক আচরণের কারণেই নজরুলের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অসুস্থ্য হয়ে ছুটি চাওয়ার পরও ছুটি না দিয়ে তারা শ্রম আইনের লঙ্ঘন করেছে। উপরন্তু তাকে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে কাজ করতে বাধ্য করেছে। নজরুলের অসুস্থ্যতার বিষয়টি কারখানার মালিকও জানতো। এজন্য কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে মানবিক বিবেচনায় হলেও ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।
Leave a Reply