পাচার করা অর্থে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ বিলাসবহুল বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন এমন বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম-পরিচয় চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদক থেকে এ চিঠি পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে দুদকের মানিলন্ডারিং বিভাগের মহাপরিচালক আ ন ম আল ফিরোজের পাঠানো ওই চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে এ তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।
চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার খবরের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের এক সুয়োমোটো রুলে (নং ২২/২০২০) দুদককে অন্যতম রেসপন্ডেন্ট করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ পাচারকারীদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিদেশে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন এমন বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
এর আগে গত বছরের ২২ অক্টোবর বিভিন্ন দেশে পাচার করা অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরেকটি চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক।
সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, রাজনীতিবিদেরা নন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। গোপনে কানাডার টরেন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। আমার ধারণা ছিল, রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এছাড়া কিছু আছেন তৈরি পোশাকশিল্প ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। পাচারে শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা। তবে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে তথ্য বের হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, আসলে সংখ্যাটি তত নয়।
পাচারের দায় বিদেশি সরকারও এড়াতে পারে না উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে কেউ টাকা রাখলে, সেই তথ্য তার দেশের সরকার দেয় না। তারা ট্রান্সপারেন্সির কথা বলে, কিন্তু যদি বলি কার কার টাকা আছে, সেই তথ্য দাও, তখন তারা দেয় না। এটি একটি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।
জানা গেছে, পাচার করা অর্থের তথ্য চেয়ে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসহ রুল জারি করেন। রুলে টাকা পাচারকারী সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রুত সময়ের মধ্যে তথ্য প্রদান করবে বলে মনে করেন দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
Leave a Reply