করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। চীনে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে গত রোববার প্রাণহানির সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এএফপি। করোনার তাণ্ডব চলছে ভারতের বস্তি থেকে ব্রাজিলের গহিন অরণ্য আমাজন ও আমেরিকার বৃহত্তম শহর নিউইয়র্কেও। করোনার ভয়াল ছোবল থেকে রেহাই মিলছে না কারও। মহামারির বিধিনিষেধ মানুষকে ঘরবন্দি হতে বাধ্য করায় থমকে গেছে বিশে^র বড় বড় সব ক্রীড়া, বিনোদন অনুষ্ঠান। করোনার বিস্তার ঠেকাতে দেশে দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ভ্রমণপিপাসুরাও আটকা রয়েছেন চার দেওয়ালের মাঝে। করোনাভাইরাসের বিস্তারের গতি ধীর করতে গত এপ্রিলে মানবজাতির অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ লকডাউনের বেড়াজালে আটকা পড়েন। লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল কিংবা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বিশ^জুড়ে আবারও এই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে, বেড়েছে প্রাণহানিও।
সোমবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, রোববার আন্তর্জাতিক সময় রাত সাড়ে ১০টায় বিশ^জুড়ে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা ১০ লাখ ৯ জনে পৌঁছায়। এ ছাড়া এই সময়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ ১৮ হাজার ৮৭৭ জনে দাঁড়ায়। বিশে^ এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্র; দেশটিতে করোনার সংক্রমণ দ্রুতগতিতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। রোববার জনস হপকিন্স বিশ^বিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭০ লাখ ৭৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এতে মারা গেছেন ২ লাখ ৯ হাজারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় প্রাণহানির শীর্ষে আছে ব্রাজিল (১ লাখ ৪১ হাজার ৭৭৬ জন), ভারত (৯৫ হাজার ৫৭৪ জন), মেক্সিকো (৭৬ হাজার ৪৩০ জন) ও ব্রিটেন (৪৬ হাজার ৭০৬ জন)।
করোনাভাইরাসের তাণ্ডব বিশ^জুড়ে অব্যাহত থাকলেও বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত এর কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেননি। জীবন-জীবিকার মাঝে ভারসাম্য আনতে বিশ^জুড়ে বিধিনিষেধে শিথিলতা আনতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ^ অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। বিশে^র বেশিরভাগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। তবে ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক গতি পুনরুদ্ধারের ধারায় রয়েছে চীন। মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে টানা চতুর্থ মাসের মতো গত আগস্টে মুনাফা বেড়েছে চীনা ব্যবসায়ীদের। করোনার প্রথম ধাক্কায় বিপর্যস্ত ইউরোপে দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্যারিস, লন্ডন ও মাদ্রিদের মতো বেশ কিছু শহরে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যেভাবে এসব শহরে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে তাতে হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের দিকে বিশ^জুড়ে করোনার রেকর্ড সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। ঐক্যবদ্ধভাবে মহামারি মোকাবিলার কৌশল না নেওয়া হলে বিশ^জুড়ে ভ্যাকসিন আসার আগেই প্রাণহানির সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো সার্স-কোভ-২ ভাইরাস শনাক্ত হয়। প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উহান থেকে বিশে^র দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। তবে এর উৎপত্তি নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা থাকলেও অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, বাদুড়ের শরীর থেকে অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণী হয়ে মানুষের দেহে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।
Leave a Reply