যারা দেশমাতৃকার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন এবং স্বাধীনতা অর্জনে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব অর্জন করেছেন তাঁদের খেতাব বা পদক বাতিল করা মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করে না। প্রতিহিংসামূলক কোন সিদ্ধান্ত ‘ঐতিহাসিক ন্যায্যতা’কে বিলুপ্ত করে দিতে পারে না। অতীতের গৌরবউজ্জ্বল কৃতিত্বকে বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা কোনভাবেই সুবিচার নিশ্চিত করেনা এবং নৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়।
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিল করার প্রতিবাদ জানিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব গণমাধ্যমে এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে যিনি বীরত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন স্বাধীনতা পরবর্তী কালে তার কোন কর্মকান্ড আইনের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ হলে সে ক্ষেত্রে আইনত পদক্ষেপই হবে একমাত্র সমাধান।
সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রাষ্ট্র যাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে ৫০ বছর পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দৃষ্টিতে তা পূর্ণমূল্যায়ন করা নৈতিকতার বিচারে গ্রহনযোগ্য নয়।
মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত বীরত্বপূর্ণ খেতাব যদি রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বাতিল করা হয় তাহলে তা মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ১৯৭২ সালেও আমরা সংকীর্ণ রাজনৈতিক কারণে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সিপাহসালার সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিলকে বীরত্বপূর্ণ কোন খেতাব দিতে পারেনি। এর দায় অবশ্য আমাদের কে বহন করতে হবে।
এসব সিদ্ধান্ত কোনক্রমেই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বা লাখো লাখো শহীদের আত্মার প্রতি সম্মান বা মর্যদা নিশ্চিত হয় না। বরং মুক্তিযুদ্ধকে যারা বিতর্কিত করতে চায় তাদের প্রণোদনা যোগাবে।
এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি ক্ষমতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ারে পরিণত হয় তাহলে ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
গত ৫০ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মহান অর্জনকে ধুলিস্যাৎ করা হয়েছে, সংবিধানের মৌল কাঠামোকে পরিবর্তন করা হয়েছে, সাংবিধানিক এবং অসাংবিধানিক পন্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। এসব দায় থেকে কোন শাসক গোষ্ঠীরই অব্যাহতি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা পুনর্বহালের ভুল রাজনীতির কারণে জাতিকে ‘উচ্চ মূল্য’ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এ থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেনি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে রাষ্ট্রকে দুর্বৃত্তায়ণের চক্রে আবদ্ধ করা হয়েছে যা নিঃসন্দেহে লজ্জাজনক। এখন সময় এসেছে আত্মসমীক্ষার।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহন এবং মুক্তিযুদ্ধে যার যার অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করাই হবে আমাদের রাজনৈতিক কর্তব্য, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা বা হেয় করার যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকাই হবে শুভ বুদ্ধির পরিচায়ক।
Leave a Reply