দেশের ব্যাংক খাত বলা চলে কোটিপতিদের দখলে। বর্তমানে দেশের ব্যাংকখাতে যত আমানতকারী রয়েছেন, এর ১ শতাংশেরও কম হচ্ছেন কোটিপতি। তবে এদের মোট আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ব্যাংকখাতে মোট আমানতের প্রায় ৪৩ শতাংশ। এর বিপরীতে ব্যাংক খাতে যত ঋণগ্রহীতা রয়েছেন, এর মধ্যে ১ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যাও ১ শতাংশের কম। তবে এদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ব্যাংকখাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ কোটিপতি আমানতকারী ও আমানত এবং কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ঋণগ্রহীতা ও গৃহীত ঋণের পরিমাণÑএ দুয়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতা ও ঋণের পাল্লাই ভারি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জুন শেষে দেশের ব্যাংকখাতে মোট আমানকারীর সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৭৬৬ জন এবং এদের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারী ও তাদের আমানতের পরিমাণ হচ্ছে যথাক্রমে ৮৬ হাজার ৩৭ জন এবং ৫ লাখ ৪১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকখাতের মোট আমানতের ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশের মালিক হচ্ছেন মাত্র দশমিক ০৮ শতাংশ আমানতকারী।
অন্যদিকে একই সময়ে দেশের ব্যাংকখাতে মোট ঋণগ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ৮১ হাজার ২৩৮ জন এবং এদের মোট গৃহীত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ঋণগ্রহীতা ও তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে যথাক্রমে ১ লাখ ৩ হাজার ৭২ জন এবং ৭ লাখ ৭৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ দশমিক ৯৬ শতাংশ গ্রাহকের কাছে যাচ্ছে ৭৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ ঋণ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকখাতে ১ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে আমানতকারী ও আমানতের চেয়ে ১ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ও তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ বরাবরই বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন (ডিসেম্বর ২০০৮) দেশের ব্যাংক খাতে মোট কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩ জন এবং তাদের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এটা তখন ছিল ব্যাংক খাতে মোট আমানতের ৩১ শতাংশ।
গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক ১ কোটি টাকার অধিক আমানতকারীর সংখ্যা ও তাদের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮৩ হাজার ৮৩৯ জন এবং ৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। মোট আমানতকারীর মাত্র দশমিক ০৮ শতাংশ হচ্ছে কোটিপতি এবং তাদের আমানতের পরিমাণ হচ্ছে মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ এগারো বছরের (২০০৯-২০১৯) ব্যবধানে দেশের ব্যাংক খাতে ১ কোটি টাকার অধিক আমানতকারীর সংখ্যা সাড়ে চারগুণ বেড়েছে, আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৭ গুনের বেশি ও ব্যাংক আমানতে অংশীদারিত্ব বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকখাতে ১ কোটি টাকার অধিক মোট ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন এবং গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এটা ছিল ব্যাংক খাতে সে সময়ের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ১ কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ও তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৭ হাজার ৬০৫ জন এবং ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এটা ব্যাংক খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ এগারো বছরের (২০০৯-২০১৯) ব্যবধানে দেশের ব্যাংক খাতে ১ কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা চারগুণ বেড়েছে, ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে ছয়গুণের বেশি, ব্যাংক ঋণে অংশীদারিত্ব বেড়েছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
Leave a Reply