সিলেটে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া রায়হানের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অতিরিক্ত ও ভোতা অস্ত্রের আঘাতই রায়হানের মৃত্যুর কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রিপোর্ট হস্তান্তর করেছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
রায়হানের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তেও প্রথম প্রতিবেদনের সামঞ্জস্য পেয়েছে ফরেনসিক মেডিকেল বোর্ড। এছাড়া অতিরিক্ত আঘাতের কারণেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে এবং ভোতা অস্ত্রের আঘাতেই তার শরীরে জখম হয়েছে বলে জানান বোর্ডপ্রধান ডা. শামসুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের কাছে ময়নাতদন্ত হস্তান্তর শেষে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয়প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম।
তিনি জানান, প্রথম ময়নাতদন্তে ১১১টি আঘাতের চিহ্নসহ অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন গত ১৫ অক্টোবর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, রায়হানকে ধরে ফাঁড়িতে এনে তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তার শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪টি ছিল গুরুতর। তার দুটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। আর এমন নির্যাতন চালানো হয় তার মৃত্যুর ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে। এছাড়া তার শরীরে চামড়ার নিচ থেকে প্রায় ২ লিটার রক্ত পাওয়া গেছে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর রাত ৩টা ৯ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে স্বাভাবিক অবস্থায় রায়হানকে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে আনা হয়। পরে সকাল ৬টা ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে ফাঁড়ি থেকে বের করা হয়। ৬টা ৪০ মিনিটে ভর্তি করা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান।
ওই হাসপাতালেই বেলা ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ১৫ অক্টোবর সেই ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, রায়হানের মৃত্যুর ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। সে হিসাবে ফাঁড়িতে আনার পর থেকেই তার ওপর নির্যাতন চলে।
রিপোর্টে বলা হয়, রায়হানের ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল আর বাম হাতের অনামিকার নখ উপড়ানো ছিল। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ কারণ ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
Leave a Reply