জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, সরকারী দলের অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এই অশনি সংকেত ভালো নয়, এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারী দলের এক সংসদ সদস্য তাদের এক শীর্ষ নেতাকে রাজাকার পরিবারের সদস্য বলেছেন। এক শীর্ষ নেতার পৌর নির্বাচনকে ঘিরে প্রকাশ্যে এসেছে এই বিরোধ। তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে, জনগণের স্বার্থ নিয়ে ভাবনার সময় নেই তাদের। অবস্থা এমন হয়েছে যে বিরোধী দলের আর কিছুই বলতে হচ্ছে না, নিজেরাই নিজেদের অপকর্ম প্রকাশ্যে তুলে ধরছেন।
আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান-এর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় তরুণ পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর-এর প্রথম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এ কথা বলেন।
এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু আরো বলেন, নির্বাচনে সন্ত্রাস হচ্ছে, প্রার্থী খুন হচ্ছে। এমন নির্বাচন আমরা চাইনা। আমরা চাই মানুষ যেন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। সরকারী দলের এক শীর্ষ নেতার ভাই বলেছেন, সরকার ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলেও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি।
জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আরো বলেন, দেশে ভ্যাকসিন এসেছে-এটা আনন্দের খবর। কিন্তু ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের কোন রোডম্যাপ নেই, কোন নীতিমালা নেই সরকারের। দেশের মানুষ জানতে চায় কারা প্রথম ভ্যাকসিন পাবে, কীভাবে দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। দেশের প্রতিটি মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে হবে। কারণ, ভ্যাকসিন পাওয়া আমাদের জন্মগত এবং সাংবিধানিক অধিকার। তাই প্রত্যেকে ভ্যাকসিন দিতে সরকার বাধ্য।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব আরো বলেন, দেশের মানুষ যতটা উন্নয়ন চায়, তার চেয়ে বেশি সুশাসন চায়। পদ্মা ব্রীজ আর ফ্লাইওভার-এর আগে সুশাসন চায় মানুষ। সুশাসন নিশ্চিত না হলে ঐ ব্রীজ দিয়ে ১০টি হোন্ডায় ২০টি গুন্ডা দ্রুত সময়ে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উন্নয়নের সাথে সুশাসন নিশ্চিত করেছিলেন। তাই দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সরকার চায়, দেশের মানুষ পল্লীবন্ধুর সোনালী অধ্যায়ে ফিরে যেতে চায়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমালোচনা করে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ৯০ সালের পর দুটি দল পরিকল্পিতভাবে তরুণ সমাজের মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকারী দলের ছত্রছায়ায় তরুণদের ক্যাসিনো, জুয়া ও মদের ব্যবসায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল তরুণরা কিন্তু তাদের কথা কেউ ভাবেনা। এখন অনেককেই আটক করা হয়েছে কিন্তু বছর ঘুরলেও তাদের বিচার হচ্ছেনা। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের সংসদে ও রাজপথে ধর্ষণ রোধে মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইন করতে দাবি জানিয়েছিলেন। সরকার মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইন করেছে কিন্তু ধর্ষণ কমেনি। আবার মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকলেও হত্যা কমছেনা। কারণ, আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে।
দ্রুততার সাথে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, বৈশি^ক মহামারির কারণে সারা বিশে^ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিলো, কিন্তু এখন সবাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। বলেন, দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে দেশের ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়বে। অটোপাশের কারণে শিশুরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন জাতীয় তরুণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক ও জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন মৃধা। জাতীয় তরুন পার্টির মহানগর উত্তর-এর আহ্বায়ক কে.এম. সুজনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কে.এম. কামাল উদ্দিন স্মরণের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ফকরুল আহসান শাহজাদা, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, আনোয়ার হোসেন তোতা। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় তরুন পার্টির সদস্য সচিব মোড়ল জিয়াউর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাখন সরকার, যুগ্ম দফতর সম্পাদক-মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ ফারুক শেঠ, শেখ মোঃ সারোয়ার হোসেন, জিয়াউর রহমান বিপুল, জাতীয় তরুন পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হক জুয়েল, এডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, তরুন পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর-এর নেতা এন.কে. সোহেল, শ্রী উজ্জ্বল কুমার দাস, শাহাদৎ হোসেন সজীব, হেলাল বিশ্বাস, হেলাল মজুমদার, বেলায়েত হোসেন, সাইফুল ইসলাম, মোঃ কবির আলী, আজাহার আলী মিন্টু, আশিকুর রহমান মোস্তফা, হুমায়ুন কবির, হালিম হাওলাদার, মোঃ নান্টু বিশ্বাস, বিল্লাল আহমেদ, মোঃ সোলায়মান, জালাল আহমেদ, শফিকুল ইসলাম, হাসান হাজারী, মোঃ হাসান মিয়া।
খন্দকার দেলোয়ার জালালী
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর
প্রেস সেক্রেটারি-০২।
Leave a Reply