মিয়ানমারের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। সূচির দল পেয়েছে ৩৪৬টি আসন, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২২টি আসন।
এনএলডির মুখপাত্র মনিওয়া অং শিন বলেন, আমরা ভূমিধস জয় পেয়েছি। জনগণ আমাদের দলকে যে সমর্থন করেন তার প্রমাণ এই বিপুল বিজয়। তবে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমরা জাতীয় সরকারের মতো করে একটি সরকার গঠন করব।
মিয়ানমারের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ৪২৫ ও উচ্চকক্ষে ১৬১ আসন রয়েছে। ৫০ বছরের বেশি সময়ের সেনাশাসনের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ২০১৫ সালে দেশটিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে সু চির এনএলডি ভূমিধস জয় পায়। ওই বছর দলটি সংসদের মোট ৩৯০ আসনে বিজয়ী হয়। এবার সেই সংখ্যাও ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করেছিল সু চি শিবির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এনএলডি
একসময় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে খ্যাতি অর্জন করা সু চি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কার্যত কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েন। কিন্তু মিয়ানমারের জনগণের মধ্যে তিনি এখনও জনপ্রিয়। সু চির দল এনএলডি এই নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছিল আগেই।
ন। দেশটিতে রোববার সূর্য ওঠার আগেই অনেকে ভোট দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অনেকে ভোট দিয়েছেন। মিয়ানমারে ৩ কোটি ৭০ লাখের বেশি নিবন্ধিত ভোটার রয়েছে। দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও মানুষ ভোট দিতে বের হয়েছিলেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান জানালেও সেখানকার ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেখানকার ৩ লাখের বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা ভোট দেয়ার সুযোগ পাননি।
বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে নামের অধিকার গ্রুপ এবারের নির্বাচনকে জাতিবিদ্বেষী নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, মিয়ানমারের নির্বাচন উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হয়নি। দেশটির বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০ লাখ মানুষ ভোটবঞ্চিত হয়েছেন।
মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব প্রবল। সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সেনাসদস্যদের জন্য বরাদ্দ। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর দেখভালও সেনাবাহিনী করে।
২০১৭ সালের ২৫ মার্চ থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন করে নৃশংসতা শুরু করে মিয়ানমারের সেননাবাহিনী। গণধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনসহ এমন অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। এসব কারণে বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ নিয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় সেনাবাহিনীর হয়ে সাফাই গেয়েছেন অং সান সু চি।
Leave a Reply