রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আজ আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করছি। এ সময়ে রাজনীতিতে অনেক চড়াই-উৎরাই ঘটেছে। কিন্তু রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন কতটুকু হয়েছে তা ভেবে দেখতে হবে। ব্যক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ বড়- এটাই হচ্ছে রাজনীতির মূল আদর্শ। আজকাল যেন রাজনীতি উল্টো পথে হাঁটছে।
বুধবার (১৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।
বুধবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আয়োজনের থিম ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছে জ্যোতির্ময়’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ। ভিডিওতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, কিছু সুবিধাবাদী লোক রাজনীতিটাকে পেশা বানিয়ে ফেলেছেন। রাজনীতি আর পেশা এক জিনিস নয়। পেশার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের ও পরিবার-পরিজনের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। আর রাজনীতি হচ্ছে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার একটি মহান ক্ষেত্র। তাই রাজনীতিকে পেশা মনে করলে দেশ ও জনগণের কথা ভুলে নিজের ও পরিবারের গণ্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খেতে হবে।
রাজনীতিবিদদের বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকীর এই দিনে আমি রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানাবো, আসুন বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত করি।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দশ জানুয়ারি তিনি যেমন ফাঁসি ও মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন, তেমনি শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু চর্চার বিরল সুযোগ তৈরি হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী তাকে নতুনভাবে জানার সুযোগ পাচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা প্রসঙ্গ তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। থমকে গিয়েছে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু, আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। এ জন্য আমি জাতীয় কমিটি ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মী আবদুল হামিদ বলেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বা ভোগ-বিলাস কোনও কিছুই তাকে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু চাইলেই অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মহাসুখে দিন কাটাতে পারতেন। বিত্ত-বৈভবে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি অবলীলায় এসব প্রত্যাখ্যান করে দেশ ও জনগণের অর্থাৎ বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বার্থকেই জীবনের ব্রত হিসাবে নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর আপসহীন নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, পাকিস্তান জেলে থাকাকালীন ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধুকে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল আকবরের সামনে হাজির করা হয়। ইয়াহিয়ার ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধু তার কাছে এসে প্রাণের ভয়ে নরম হয়ে যাবেন এবং সেই সুযোগে তার কাছ থেকে আপসের প্রস্তাব পাওয়া যাবে। তিনি এই মানসে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর দিকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘দুঃখিত, ও হাতে বাঙালির রক্ত লেগে আছে, ও হাত আমি স্পর্শ করতে পারব না’।
আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে তার প্রতি আমাদের অপরিশোধ্য ঋণের কিছুটা হলেও শোধের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতি বিজড়িত তেজগাঁও পুরাতন বিমান বন্দর সংলগ্ন জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আজকের আয়োজনটি সর্বাঙ্গে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Leave a Reply