বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সবসময় সরকার ঘেঁষা ছিলেন এবং রাজনীতিতে বারবার দল বদল তার অভ্যাস ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মওদুদ সবসময় একটু সরকার ঘেঁষা ছিলেন। রাজনীতিতে বারবার দল বদল তার অভ্যাস ছিল, এতে কোনও সন্দেহ নেই। তার কিছু কিছু কাজ সময় সময় একটু ভিন্ন ধরনের ছিল, যার কারণে ৭৩ সালে তাকে একবার গ্রেফতারও করা হয়। কারণ বাংলাদেশের কিছু গোপন তথ্য তিনি পাচার করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মারা যান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দি করা হয়, তখন যে মামলা চলছিল, এখানে অবশ্য তার জীবনীতে লেখা আছে তিনি আইনজীবী ছিলেন। আসলে তিনি কোনও অ্যাপয়েন্টেড আইনজীবী ছিলেন না। তিনি ড. কামাল হোসেন সাহেব ও বঙ্গবন্ধুর পিএস মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গেই ঘুরতেন। তিনি সেই গ্রুপের সঙ্গে সবসময় ছিলেন বিশেষ করে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের সঙ্গে তার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই দুইজন সবসময় একসঙ্গে চলতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এখনও মনে আছে, যখন আইয়ূব খান গোলটেবিল বৈঠক ডাকল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আগরতলা মামলায় বন্দি অবস্থায় প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব হলো, তখন আমার মা এ বিষয়ে কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মামলা প্রত্যাহার করে মুক্ত মানুষ হিসেবে যেন তিনি (বঙ্গবন্ধু) যান। তিনি প্যারোলে যাবেন না।
এ তথ্যটি আমি মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আমার বাবাকে পৌঁছে দিয়েছিলাম। যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে। সেখানে আমাদের অনেক নেতা তখন উপস্থিত ছিলেন। তাজউদ্দিন আহমেদ, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আমিরুল ইসলাম, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদসহ আরও নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তারা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং সেটাই তারা বলা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি যখন আমার মায়ের বার্তাটা পৌঁছে দিই। অবশ্য বঙ্গবন্ধু নিজেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাকে মুক্ত না করলে তিনি যাবেন না।
তিনি বলেন, মায়ের বার্তাটা পৌঁছে বাসায় ফিরে আসার পর দোতলার বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে আছি। আমিরুল ইসলাম ও মওদুদ আমার কাছে আসেন। আমার কাছে এসে এ কথাই বলেছিলেন- এটা আমিরুল ইসলাম সাহেবই বলেছিলেন আর মওদুদ তাকে সায় দিয়েছিলেন যে, তুমি কেমন মেয়ে, তুমি চাও না তোমার বাবা কারাগার থেকে ফিরে আসুক? জবাবে আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ আমার বাবা সম্মান নিয়েই ফিরে আসবেন।
আপনারা এ সমস্ত বিভ্রান্তি ছাড়বেন না। তিনি (মওদুদ) মুখে যাই বলুক, আবার তার লেখাগুলির মধ্যে অনেক সময় অনেক কন্ট্রোভার্সিয়াল কথা আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি লিখেছেন।
মওদুদ সম্পর্কে সরকার প্রধান আরও বলেন, সবসময় তিনি দলবদল করতে পছন্দ করতেন। যখন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ, সেই ৬৯ সালে আমাদের সঙ্গে মিশে গেলেন। পঁচাত্তরের পরে বিএনপিতে যোগ দিলেন।
তিনি সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি ছিলেন। জেনারেল এরশাদ সাহেব তাকে ক্ষমা করে দিয়ে আইনমন্ত্রী করলেন। আবার তিনি বিএনপিতে যোগদান করলেন।
রাজনীতিতে বারবার দল বদল তার অভ্যাস ছিল এতে কোনও সন্দেহ নেই। তারপর বলবো, তিনি ট্যালেন্টেড মানুষ ছিলেন, দেশপ্রেম কাজে লাগালে হয়তো দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।
Leave a Reply