নাটারের লালপুরের বিলশলীয়া বিলে সরকারী খাস জমি দখল ও দুটি ব্রীজর প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দুটি পুকুর খননের অভিযাগ উঠেছে এক সরকারী কর্মকতার্র স্বজনদের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর অভিযাগ ওই সরকারী কর্মকতার্র পরিবার তার প্রভাবকে ব্যবহার করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই অবৈধ পুকুরটি খনন করেছেন। যাতে করে ওই বিলের কয়েকশ একর জমিতে বৃষ্টি বা বর্ষা হলে জলাবদ্ধতার সষ্টি হবে। এতে করে দুই তিন ফসলী জমি এক ফসলী ও শত শত বিঘা জমি অনাবাদী জমিতে পরিণত হবে। তবে পুকুর খননকারীদর অভিযাগ এত পানি প্রবাহর কোন বিঘ্ন ঘটবে না , তবে পুকুরের মধ্যে সরকারী জায়গা থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তারা।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিলশলীয়া বিলের দুটি ব্রীজের মাঝখানে দুটি পুকুর খনন করা হয়েছে। যাতে বন্ধ হয়ে গেছে দুটি ব্রিজের প্রবেশ মুখ। এতে করে সামান্য বৃষ্টি বা বর্ষা হলে পানি প্রবাহর কোন সুযোগ থাকবে না । এছাড়া স্থানীয়রা অভিযোগ করেন , খননকরা পুকুরটির মধ্যে খাস জমি রয়েছে । পুকুর মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় করো কোন কথাই তারা কর্ণপাত করছেনা।
তারা জানান, স্থানীয় শরীফ আহমেদ লিংকন একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়ায় তার প্রভাবকে কাজে লাগিয় স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা দ্রুত পুকুরটি খনন করে ফেলেছেন। এছাড়া লিংকনের স্বজনরা সন্ত্রাসী কায়দায় এলাকার কৃষকদের নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে পুকুর খননকালে প্রতিবাদ করারও সুযাগ দেননি। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করার অভিযাগ দিলেও বন্ধ হয়নি পুকুর খনন। পরে বিষয়টির সমাধান করতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযাগও দাখিল করেছেন।
বিষয়টি খোঁজ নিতে সংবাদকর্মিরা ঘটনাস্থলে গেলে মুহুর্তেই প্রচুর জন সমাগমের সৃষ্টি হয়। এ সময় পুকুর খননের ফলে নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরেন তারা।
এ সময় বিলের জমিতে চাষরত স্থানীয় কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, ব্রীজ বন্ধ করে পুকুর খনন করায় তারা তাদের ফসল নিয়ে শংকিত। বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে তাদের ফসল ঘরে উঠবে কিনা তাই নিয়ে সংশয় আছেন তিনি। এছাড়া বষার্র পানি নামাতেও বিঘ্ন ঘটবে বলে জানান তিনি।
ইজাহার আলী নামে আরো এক ব্যক্তি জানান, এই বিলে হাজার হাজার বিঘা কৃষকের জমির পানি প্রবাহ হতো এই ব্রীজর নিচে দিয়ে। কিন্তুু পুকুর করায় এই পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এতে তাদের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। এমনকি অনেক জমি অনাবাদী হওয়ার আশংকা করেন তিনি। তিনি বলেন, সরকার যখন পানি প্রবাহ নির্বিঘ্ন করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সেখানে তারা আমাদের বিলের পানি প্রবাহ বাধার সৃষ্টি করা হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
আব্দুল হক নামে আরো একজন কৃষক বলেন তাদের ফসল আবাদ করা এখন শংকার মধ্যে পড়লো । দুই পাড়ই পুকুর করায় তারা এখন কিভাবে পানি নিষ্কাষন হবে তানিয়ে চিন্তিত তারা।
এদিকে কৃষকদের এমন নানা অভিযাগ ও কষ্টের কথা যখন শুনছিলেন সংবাদকর্মিরা তখনই একটি বাইক যোগে পুকুর মালিকের ছেলে সহ ৩জন সন্ত্রাসী কায়দায় সেখানে উপস্তিত হয়ে সবাইকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এসময় কৃষকরা প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠলে সেখানে বাকবিতন্ডার ও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরে গণমাধ্যমকর্মিদের মধ্যস্ততায় পরিসমাপ্তি হয়। তবে এ সময় সংবাদকর্মিদের সাথে উত্তেজিত হওয়া গোয়ালীপাড়ার শিবলি নামের এক যুবক নিজেকে পুকুর মালিক পক্ষের দাবী করলেও আসল পুকুর মালিকের সাথে তার অবস্থান পরিস্কার করতে পারেননি তিনি। এ সময় তিনি একবার পুকুর মালিকের ভাই ও আরেকবার লিজগ্রহীতার লোক বলে দাবী করে। পরে বিভিন্নি প্রশ্নের উত্তরের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। ফসলী জমিতে পুকুর খনন বৈধ কিনা বা পাস আছ কিনা জানতে চাইলে প্রথমে পাস ও বৈধতার দাবী করলেও পরে তার ব্যাপারে কোন প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হন সে।
এ সময় পুকুর মালিক শরীফ আহমদ লিংকনের ছোট ভাই আবু সাইদ দুলু বলেন, সরকারী নিয়ম মেনে তারা পুকুর খনন করছেন। এতে পানি প্রবাহের কোন সমস্যা হবে না । কারণ পানি প্রবাহের জন্য তারা রিং স্থাপন করবেন। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে সমস্যা হলে তারা পুকুরের পাড় কেটে দেবেন । তবে পুকুরের মধ্যে সরকারী খাস জায়গা থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তার দাবী রাস্তা করার সময় তাদের জমি রাস্তার মধ্যে চলে যা্ওয়ায় পাশের খাস জমিতে তারা পুকুর খনন করছেন। পুকুর খনন ব্যাপারে তিনি বলন, প্রশাসনের মোখিক অনুমতি নিয়ে তারা পুকুর খনন করছেন। কারণ প্রায় ২০ বছর থেকে তারা জমিতে কোন ফসল পান না।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম দাবী করেন,এই দুটি ব্রীজ দিয়ে দুই ইউনিয়নের পানি প্রবাহ হয়। এখন দুটি পুকুর খননের ফলে সেই পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধকতার সৃষ্টি হবে। এরা প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে মানুষকে জিম্মি করে এসব কাজ করে। আজ সন্ত্রাসী নিয়ে হাজির হওয়ায় তার প্রমাণ করে।
তিনি আরও বলেন স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ দিয়ে কাজ হয়নি তাই উর্দ্ধতন বিভাগেও অভিযোগ করা হয়েছে। অবিলম্বে এই পুকুর অপসারণ করা না গেলে আগামী বর্ষার মৌসুমে এ এলাকায় কৃষকদের কষ্টের শেষ থাকবে না। সেখানে উপস্তিত আড়বাব ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, পুকুর খননের ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোন মতামত নেয়া হয় নি। বরং জানতে চাইলে তাদের হুমকি ধামকি প্রদান করা হয়। এ সময় তিনি বলন এই পুকুর খননের ফল এলাকার যে ক্ষতি সাধন হবে তা পূরণ করা অসম্ভব। তাই এটা প্রতিরাধ করা না গেলে এলাকার মানুষ চরম ক্ষতিতে পড়বেন।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজলা নিবার্হী কর্মকতর্তা ও লালপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মী আক্তার জানান, আমি নিজে গিয়ে দেখেছি, পুকুর খনন যেভাবে হয়েছে তাতে করে পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হবে। আর খাস জমিতে পুকুর খননের ব্যাপারে সত্যতা স্বীকার করে বলেন মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিক অভিযুক্ত সরকারী কর্মকর্তা ও বাগমাড়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার শরীফ আহমেদ লিংকনের মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply