দেশের সিপাহী জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে ৭৫ এর ৭ নভেম্বর সেই পরাজিত অপশক্তি এখন মহাজোটের নামে একজোট হয়েছে।
পরাজিত সেই অপশক্তি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদ ও সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে রেখেছে। কারণ অপশক্তি খুব ভালো করে জানে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করা না গেলে ৭৫ এর পরাজিত অপশক্তির পক্ষে কখনও রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা।
আজ সোমবার বিকাল ৩টায় বিএনপির ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় এক এগারো বিরাজনীতিকরণের ধরাবাহিকতায় চলমান ফ্যাসিবাদ বিষয়ক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন বিএনপি নেতারা ।
তারা বলেন, দেশের ইতিহাসে ১/১১ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ১/১১ এর সৃষ্টি। যারা বাংলাদেশকে একটি তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে চায়, সে অপশক্তি এবং তাদের দোষরদের ষড়যন্তের ফসল ২০০৭ সালের তথাকথিত ১/১১। আমাদেরকে সচেতনভাবে উপলব্দি করতে হবে, বর্তমানে যে রাজনৈতিক অপশক্তি গণতন্ত্র হত্যা এবং ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতা জবর দখল করে আছে, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে তাদের পূর্বসূরীরাও একইভাবে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। তারাও গণতন্ত্র বিকশিত হতে দেয়নি, তারাও দেশে জন্ম দিয়েছিল বর্তমানের মতো সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য। গণতন্ত্রকামী মানুষ এমন নৈরাজ্য মেনে নেয়নি বলেই বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আওয়ামীলীগ এবং তাদের দোসরদের তথা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী শক্তিকে পরাজিত করেছিল।
নেতারা আরো বলেন, দেশ প্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক মাদার অব ডেমোক্রিটিক্স বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির সাফল্য বাধাগ্রস্ত করতেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই অপশক্তি ২০০৪ সালে একুশে আগস্টের ঘটনা ঘটায়। একুশে আগস্ট এবং কথিত ১/১১ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১/১১ এবং একুশে আগস্টের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। ৭৫ সালের নভেম্বরে যারা দেশকে বিপথে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল ২০০৭ সালে কথিত ১/১১ এর মাধ্যমে তারা সফল হয়। এরপরই তারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত হয়।
তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুকৌশলে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার নির্মম হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল। পরবর্তীতে বহু সেনা কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং তা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে রাজধানীতে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড আমি মনে করি এবং বিশ্বাস করি আমাদের দেশের সকল মানুষ বিশ্বাস করেন এটি কোন দুর্ঘটনা নয়। বরং সেটি ছিলো একটি পরিকল্পিত সেনা হত্যা যজ্ঞ। সেনা হত্যাযঙ্গের এই দিনটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অবশ্যই জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের দাবি রাখে।
বিএনপি নেতারা বলেন, শুধু ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই নয়, ৭৫ সালের ৬ নভেম্বর দিনে ও রাতে বর্তমান ক্ষমতাসীন অপশক্তির পূর্বসূরিরা খোদ ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে এক ডজনেরও বেশি সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিল। ৭ নভেম্বর পরাজিত অপশক্তি ষড়যন্ত্রে ২১ আগস্ট আর ১/১১ এর আড়ালে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তারা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে, প্রতিশোধ নিচ্ছে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে, প্রতিশোধ নিচ্ছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, সেনাবাহিনীকে দাবিয়ে রাখা দুঃসাহস তারা দেখিয়েছেন, দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি ও সেনাবাহিনীকে দাবিয়ে রাখতে পারলে কাদের লাভ এবং কাদরে ক্ষতি তথাকথিত ১/১১ কে এই প্রেক্ষাপটে বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বা করা উচিত।
তারা বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি কথিত ১/১১ একটি রাজনৈতিক দল কিংবা একটিমাত্র নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের বিরুদ্ধে ছিল না বরং এটি ছিল বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিনাশী একটি সুদূরপ্রসারি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ। তাই দেখা যায় কথিত ১/১১ এর পথ ধরেই যে অপশক্তি ক্ষমতা জবর-দখল করেছে তারপর থেকে পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের জনগণ হারিয়েছে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার এবং মানবিক মর্যাদা। ধীরে ধীরে গৌরব এবং মর্যাদা হারাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্ট এর ডিরেক্টর হওয়া কিংবা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে একটি দেশের সেনাবাহিনীর একমাত্র ভিশন হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি দেশের সেনাবাহিনী একটি দেশের গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক। দেশের যেকোন ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেশ ও জনগণের পক্ষে সঠিক দায়িত্ব পালন, নিজ দেশের জনগণের মনে সাহস সঞ্চার করে, বহিঃশত্রুর বুকে কাঁপন ধরায়। অথচ ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর চিত্র কি এখন ভিন্ন নয়? সীমান্তে ফেলানী হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে, নিজ দেশের মর্যাদা রক্ষায় কথা বলায় আবরারদের পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর অফিসার পরিচয় দেবার পরও সেনা কর্মকর্তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে, নৌবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দেয়ার পরও চড় থাপ্পর কিল-ঘুষি দিচ্ছে। যে বাহিনী ছিলো দেশের গৌরব ও সম্মানের প্রতীক তাদের সম্মান ও গৌরবকে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। এ সবই কথিত ১/১১ এর কুফল।
যারা বলেছিলেন ১/১১ তাদের আন্দোলনের ফসল, তাদের কাছে দেশের স্বার্থ বড় নয় বরং পরিবারের স্বার্থ বড়। তাদের কাছে দেশের মর্যাদা বড় নয় বরং কথিত স্বামী স্ত্রীর কূটনীতি বড়।
তিনি বলেন, আজকের বাস্তবতা হচ্ছে পঁচাত্তরের নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশের গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের অধিকার থাকবে না। ৭৫ এর পরাজিত অপশক্তি ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজের আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হবে না। আজ তাই্ বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কথিত এই ১/১১ এর প্রেক্ষাপটে আমাদের অঙ্গীকার হোক দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও ।
ভার্চ্যুয়াল এই সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ীকমিটির সদস্যবৃন্দ, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।
Leave a Reply