হবিগঞ্জের বাহুবলে ‘চোর’ দাবি করে গাছের সঙ্গে বেঁধে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ফয়সাল মিয়া নির্যাতন করা হয়েছে।সোমবার (০২ নভেম্বর) দুপুরে মামলাটি দায়ের করেন কলেজ ছাত্রের মা রাবিয়া খাতুন।
উপজেলার দ্বিমুড়া গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী জাহানারা আক্তার লিপিকে প্রধান আসামী করে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে দুইজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত দুজন হলো, বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া গ্রামের মূল অভিযুক্ত সালাউদ্দিন (৫২) ও মঈন উদ্দিন (৪০)।
নির্যাতিত ফয়সল চুনারুঘাট উপজেলার হাসেরগাঁও গ্রামের আহসান উল্ল্যার ছেলে। সে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অনার্স (গণিত বিভাগ) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও কোরআনের হাফেজ।
পুলিশ বলছে, তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে তরুণীর স্বজনের এমনটা করেছেন।
যে বাড়িতে ফয়সালকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে সেই বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন, ফয়সাল তাঁদের বাড়িতে গিয়ে অস্ত্র হাতে বাড়ির এক মেয়ের নাম ধরে ডাকাডাকি করছিল। সে তাঁদের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁরা তাঁকে আটক করে পুলিশে দেন। ঘটনা শনিবার রাতে। পুলিশ গভীর রাতে সেফ করে। তবে ওই সময় তাঁকে নির্যাতন করা হয় এমন কিছু বলা হয়নি পুলিশকে। পরে ওই তরুণ কে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে ডাক্তার তাকে সিলেট প্রেরণ করেন এবং পরদিন একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ফয়সালকে খুটির সাথে বেধে রাখা হয়েছে। এ সময় তিনি বাঁচার জন্য আকুতি-মিনতি করছেন।
পুলিশ জানায়, তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে বাহুবল থানায় খবর দিয়ে জানানো হয় যে তাঁরা চোর ধরেছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ফয়সালের বাড়ি জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। বাহুবল উপজেলার লিজা নামের এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। শনিবার রাতে ওই তরুণী মুঠোফোনে ফয়সালকে ডেকে তাঁদের বাড়িতে নেন। এরপর তাঁর আত্মীয় স্বজন ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফয়সালকে নির্যাতন করেন।
বাহুবল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফুয়াদ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, এটা চুরির নয়; প্রেম সংক্রান্ত ঘটনা। পরে পুলিশ ফয়সালের পরিবারকে খবর দিয়ে মুচলেকা রেখে তাঁকে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করে। স্বজনেরা তাঁকে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রবিবার তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
তরুণীর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির দাবি, ওই তরুণীর সঙ্গে ফয়সালের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু মেয়ের পরিবার তা মেনে নিচ্ছে না। সে কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।
বাহুবল মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর কবীর মামলা দায়েরের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্ঠা চলছে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা গণমাধ্যমকে বলেন, মেয়েটির পরিবারের দাবি, ছেলেটি তাদের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ কারণে তারা তাঁকে আটক করে। অপর দিকে ছেলেটির দাবি, তাঁকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। কোনটি সত্য, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
তবে নির্যাতনের সময় ভিডিও কে করেছে এবং কেন কি কারণে করেছে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে বলে জানা গেছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন, ওই ব্যক্তি ভিডিও করতে পারল, কিন্তু পুলিশকে খবর দেয়নি কেন? বিষয়টা সন্দেহ জনক। তবে ভিডিওতে কোন নারীকে নির্যাতন করতে দেখা না গেলেও আসামি করা হয়েছে মা মেয়েকেও। পুলিশ বলছে, ঘটনা যাইহোক তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে একটি সুত্র জানিয়েছে, আজিজুর রহমান নামে এক সরকারি চাকরিজীবি এই ভিডিও করেন, তিনি আবার স্থানীয় সাংবাদিকতায় জড়িত বলে জানা গেছে। কিন্তু তিনি পুলিশ কে খবর দেননি বরং নির্যাতন কালে নিরব ছিলেন। পরের দিন তারই আরেক সহযোগী চুনারুঘাটের এক সাংবাদিককে দিয়ে ভিডিওটি ভাইরাল করেন। এছাড়া ৩য় কোন পক্ষ ফায়দা নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত আছে। এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে এবং এর ইন্ধনদাতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে
Leave a Reply