চারদিকে ছোট-বড় আমগাছের সারি। রাস্তাও চোখে পড়ে না, নেই ঘরবাড়িও। এর মধ্যে একটি আমগাছে দেখা গেল টঙের। লোহার মই দিয়ে তাতে ওঠে আনন্দে মত্ত শিশু-কিশোররা। বাদ যাননি অভিভাবকরাও। এছাড়া শিশুরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাগানে ঘুরছেন, আবার মেতে উঠছেন চরকিতে ঘোরার আনন্দে। আবার কেউ কেউ স্টলে বসে লোকজ ঐতিহ্যবাহী বাহারি পিঠায় কামড় দিয়ে অতীত রোমন্থনের খোশগল্পে মত্ত হয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে রবিবার আনন্দ-উল্লাস ও শিশুদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছিল দিনব্যাপী বাগান মেলা ও পিঠা উৎসব। আয়োজনকে ভিন্নমাত্রা এবং প্রকৃতি দেখার সুযোগ করে দিতে উপজেলা পরিষদ ও খাদ্য গোডাউনের পশ্চিমে আমবাগানে এর আয়োজন করা হয়।
বাগান মেলা ও পিঠা উৎসব হলেও বাড়তি আনন্দ দিতে ঘোড়ার পাশাপাশি শিশুদের বিনোদনের জন্য চরকি স্থাপন করা হয়।
সকাল ১০টায় শুরু হয় বাগান মেলা ও পিঠা উৎসব। উৎসবে নারী উদ্যোক্তাদের ১৫টির মতো স্টল ছিল। প্রত্যেকটি স্টলে শোভা পাচ্ছিল মনোমুগ্ধকর বাহারি পিঠা। পাশাপাশি নিজেদের বানানো বিভিন্ন ধরনের পণ্য। লক্ষণীয় ছিল, বিভিন্ন ধরনের কেকের আধিক্য। আরো ছিল খেজুর গুড়, ম্যাচা, নকশিকাঁথা থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক পণ্য। তবে খাবারের বেচাবিক্রিই বেশি হচ্ছিল। কেউ কেউ খাচ্ছিলেন ম্যাংগো ট্রিতে ও দোতলা কুঁড়ে ঘরে বসে।
প্রধান অতিথি হিসেবে বিকেলে বাগান মেলা ও পিঠা উৎসবে অংশ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। এ সময় তিনি আগামীতে কৃষিমন্ত্রী সহকারে বড় পরিসরে এই আয়োজন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এছাড়া আম নিয়ে সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরার জন্য কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে এলাকার আম উদ্যোক্তাদের বৈঠকের ব্যবস্থা করার কথাও জানান।
এ সময় শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,এফ,এম, আবু সুফিয়ান, সিনিয়র মৎস্য অফিসার ড. আবু বাক্কার, উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অন্য অতিথিদের মধ্যে পিঠা উৎসব পরিদর্শন করেন- উদ্যোক্তা ই-কমার্স ফোরামের অ্যাডমিন ও পরিচালক হাসানুর রহমান রনি, দৈনিক গৌড় বাংলার বার্তা সম্পাদক সাজিদ তৌহিদসহ আরো অনেকে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা ও আমচাষি সাংবাদিক আহসান হাবিব এবং উদ্যোক্তা ই-কমার্স ফোরাম এই বাগান মেলা ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করে।
আহসান হাবিব জানান, শিবগঞ্জে এই ধরনের উৎসব এটাই প্রথম। এর উদ্দেশ্য ছিল, শিবগঞ্জের মানুষের কাছে এখানকার ঐতিহ্যবাহী বাহারি রকমের পিঠা তুলে ধরা। আম ও পিঠাকে ব্র্যান্ডিং করা, উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করা, ভিন্ন আঙ্গিকে কিভাবে বাগান তৈরি ও কৃষি পর্যটন গড়ে তোলা ও উৎসাহিত করা যায় তা উপস্থাপন করার জন্য এ উৎসবের আয়োজন। পাশাপাশি আমবাগানকে তুলে ধরাও উদ্দেশ্য। তিনি আরো জানান, প্রথম এই ধরনের আয়োজনে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় উৎসব আরো একদিন অর্থাৎ সোমবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
আমগাছের ডালে শরীরে ধাক্কা খেলেও উৎসবের আনন্দে ভাটা পড়েনি তাতে। দিনব্যাপী এই উৎসব চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বাহারি পিঠা স্টলে বসে খাওয়ার পাশাপাশি অনেককে কিনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আর একরাশ প্রশান্তি নিয়ে মা-বাবার হাত ধরে বাড়ি ফিরতে দেখা যায় কোমলমতি শিশুদের।
Leave a Reply