৭৮ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার দ্বিতীয় চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজে আট হাজার ছাত্র ছাত্রীর উচ্চ শিক্ষার সুবিধার্থে সম্মান ও মাস্টার্স কোর্স চালু থাকলেও শিক্ষক সংকট ছাড়াও নানাবিধ সমস্যায় পাঠদানে মারাত্নক বিঘ্ন ঘটছে। ফলে কলেজটির পূর্বতন ঐতিহ্য ধরে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে কলেজ অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৯ সন থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় ক্ষেত্রনাথ দালাল এর নেতৃত্বে কতিপয় শিক্ষাানুরাগি মিলিত হয়ে চৌমুহনীতে কলেজ প্রতিষ্টার উদ্যোগ নেন। পরে স্থানীয় প্রসন্ন কুমার রায় চৌধুরী ও হর কুমার সাহা ৩০ শতক জমি দান করলে ১৯৪৩ সন থেকে কলেজের কার্যক্রম আরম্ভ হয়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাধা গোবিন্দ নাথ অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। ১৯৪৬ সনে নোয়াখালীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে অধ্যক্ষ ও উদ্যোক্তাদের অনেকে দেশ ত্যাগ করেন। ১৯৪৭ সনে মুকুন্দ কিশোর চক্রবর্তী অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। ১৯৫০ সনে টি হোসেন নামে খ্যাত তোফাজ্জল হোসেন অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন এবং এক নাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। কলেজের শুরুতে ৩০ শতক জমি থাকলেও পরে খরিদসূত্রে ও অধিগ্রহনের মাধ্যমে ভূমির পরিমান দাঁড়ায় ৩৫ একর। পূর্বে চৌমুহনী কলেজ হিসাবে নাম থাকলেও, স্বাধীনতা উত্তর কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সালেহ আহমদের নামে কলেজের নামকরন করা হয়।
১৯৮৪ সনে জাতীয়করন করা হয়। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করে ২০১০ সন পর্যন্ত হিসাব বিজ্ঞান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান,দর্শন, ইসলামি শিক্ষা, পদার্থ, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রানিবিদ্যা, গনিতসহ ১৩ বিষয়ে অনার্স চালু করা হয়। আরো দুই বিষয়ে অনার্স চালু করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ২০১৪ সন থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হিসাব বিজ্ঞান ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ক্লাস চালু করে।এ ছাড়া আরো চার বিষয়ে মাস্টার্স চালু করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ২০০৬ সনে নতুন করে ৫৬ টি পদ সৃষ্টি হয়ে আটজন অধ্যাপকসহ ৮৪টি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করলেও বর্তমানে রয়েছে ৫৫ জন শিক্ষক মন্ডলী। অধ্যাপকসহ বেশীরভাগ শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। অপরদিকে মাস্টাস ক্লাস চালু হলেও এর জন্য নতুন কোন পদ সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে শিক্ষক সংকটে কলেজের পাঠদানে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। পাক আমলে নির্মিত কলেজের বৃহৎ দ্বিতল ভবনটি অনেক পূর্বেই ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে এ ভবনে ক্লাস করতে হয়। শিক্ষকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষকগন তদবির করে বদলী হয়ে যায়। বেসরকারি থাকতে তিনটি ছাত্রাবাস ছিল। ১৯৯১ সনে ঝড়ে শের ই বাংলা ছাত্রাবাসটি বিধ্বস্ত হয়, এরপর আর ছাত্রাবাসটি পুননির্মান করা হয়নি। ডিগ্রী ছাত্রাবাস নামে একটি একতলা পাকা ভবন ছিল। অনেক বছর থেকে উক্ত ছাত্রাবাসটিও পরিত্যক্ত, আরেকটি ছাত্রাবাসে শিক্ষকদের আবাসনের ব্যবস্থা করায় অনেক বছর থেকে একটিও ছাত্রাবাস নেই। একটি ছাত্রী নিবাস থাকলেও একাধিক শিক্ষক পরিবার নিয়ে বাস করছে। এতে বহিরাগত ছাত্রীরা সংকটের মধ্যে পড়েছে। ছাত্রাবাস না থাকার কারনে বহিরাগত ছাত্ররা আসা যাওয়া বা থাকার জন্য সীমাহীন কষ্ট করতে হয়।
এ ব্যাপারে চৌমুহনী সরকারি সালেহ আহমদ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল বাসার জানান, কলেজে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। কলেজে ১৩ বিষয়ে অনার্স ও দুই বিষয়ে মাস্টার্স চালু রয়েছে। অনার্সে আরো দুই বিষয়ে এবং মাস্টাসে আরো চার বিষয়ে ক্লাস চালু করার প্রক্রিয়ায় বয়েছে। তবে শিক্ষক সংকট রয়েছে প্রকট। শিক্ষকদের ও ছাত্রদের আবাসন সমস্যা প্রকট। তিনি আরো জানান, অনার্স ও মাস্টার্সে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করানোর জন্য যে আসন বরাদ্ধ রয়েছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। আসন সংখ্যা দ্বিগুন করা প্রয়োজন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে ও শিক্ষক নিয়োগ করলে এ কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা যায়। এতে অনেক ছাত্রছাত্রীর উচ্চশিক্ষা গ্রহনের পথ সূগম হবে। অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার জানা, স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের প্রচেষ্টায় কলেজে একটি ছয়তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মানের প্রক্রিয়া চলছে। আরো ভবন নির্মানের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ও অধিদপ্তরে যোগাযোগ করছেন।
Leave a Reply