বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বিশারীঘাটা গ্রামে মুক্তিপণের দাবিতে ঘুমন্ত মা-বাবার কোল থেকে ৩ মাসের শিশু আব্দুল্লাহকে অপহরণের পর মুক্তিপণ নিয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়া ৩ আসামিকে যাবজজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বাগেরহাটের এক আদালাত।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ -এর বিচারক জেলা জজ মোঃ নূরে আলম এই রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামি হলো মোঃ হৃদয় ওরফে রাহাত হাওলাদার (২১), মোঃ মহিউদ্দিন হাওলাদার (২২) ও মোঃ ফায়জুল ইসলাম (২৮)। সবার বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, গত বছরের ১১ মার্চ রাতে মোরেলগঞ্জের বিশারীঘাটা গ্রামের রেশমা বেগম তার তিন মাসের শিশু আব্দুল্লাহকে নিয়ে স্বামী দলিল লেখক মোঃ সিরাজুল ইসলাম সোহাগের সাথে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমন্ত মা-বাবার কোল থেকে ওই শিশুকে রাত সাড়ে ৩টার দিকে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘুম থেকে জেগে তারা দেখতে পান বিছানায় শিশু আব্দুল্লাহ নেই।
দুধের শিশুটিকে কিভাবে অপহরণকারীরা নিয়ে গেছে কেউ বুঝতে না পেরে পুলিশে খবর দেয়। ওই দিনই অপহৃত শিশুটির বাবা মোরেলগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত অপহরণকারীদের নামে মামলা দায়ের করেন। পরে শিশুটির মুক্তির জন্য মোবাইল ফোনে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। ওই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান শুরু করে।
এই সময়ের মধ্যে শিশুটি ফিরে পেতে বাবা মোঃ সিরাজুল ইসলাম সোহাগ অপহরণকারীদের চাহিদা মতো ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণও পরিশোধ করে দেয়। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে একটি মোটরসাইকেল ফেলে রেখে যায়। সেই মোটরসাইকেল ও ঘর থেকে চুরি হওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে প্রধান আসামি মোঃ হৃদয় ওরফে রাহাত হাওলাদারসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঘটনার সাত দিন পর প্রধান আসামি মোঃ হৃদয়ের তথ্য মতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকার একটি মৎস্য খামারের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তিন আসামিই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোরেলগঞ্জ থানার এসআই মোঃ আব্দুল মতি দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে প্রধান আসামি মোঃ হৃদয়সহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার বাদি শিশুটির বাবা দলিল লেখক মোঃ সিরাজুল ইসলাম সোহাগ ও মা রেশমা বেগম এ রায়ে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোঃ এনামুল হেসেন জানান, তার মক্কেল আদালতে ন্যায় বিচার পায়নি। উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply